FAQ

কয়েকটি চক্ষুরোগে সত্বর বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নেয়া হলে- দৃষ্টিশক্তির ক্ষতিকর জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-
১। হঠাৎ করে চোখে না দেখলে বা কম দেখলে।
২। চোখ লাল হয়ে- ব্যথা করলে, আলো ভীতি হলে এবং দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে।
৩। একজন সাধারণ চিকিৎসক যদি প্রাথমিকভাবে মনে করেন রোগীর গ্লকোমা পেকে যাওয়া চোখের ছানি, কর্ণিয়ার আলসার, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, চোখের প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে তাহলে রোগীকে সত্বর চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এর জন্য পাঠাতে হবে।

কম্পিউটার ব্যবহার করলে চোখের সরাসরি কোন ক্ষতি হয় না। তবে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করলে চোখের পলক কম পড়ে এবং চোখ কিছুটা শুষ্ক হয়ে যায়। ঘাড়, মাথা বা চোখে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দুর্বল ও ক্লান্তি লাগতে পারে। এ সকল উপসর্গকে ‘কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রম’ বলা হয়ে থাকে।
কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলা, ২/১ ঘন্টা কম্পিউটারে কাজ করার পর চোখের ৫/৭ মিনিট বিশ্রাম নেয়া বা অন্য কোন দিকে তাকানো, মনিটরের সামনে সোজাসুজি বসে কাজ করা ইত্যাদি কম্পিউটার ব্যবহারে আরামদায়ক হতে পারে।
কম্পিউটারের এল.সি.ডি মনিটর সাধারণ মনিটরের তুলনায় চোখের জন্য আরামদায়ক। এজন্য দীর্ঘক্ষণ কাজ করার জন্যে পিসিতে এলসি.ডি মনিটর কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
এরপরও কারও চোখের কষ্ট থাকলে চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর নিকট চোখের পাওয়ার, চোখের প্রেসার পরীক্ষা করানো উচিত, কারণ চোখের কোন সমস্যার কারণেও কম্পিউটার ব্যবহার আরামদায়ক নাও হতে পারে।

নানা কারণে চোখ ট্যারা হতে পারে। প্রথম বংশগত কারণে। বাবা-মা পূর্ব পুরুষের ট্যারা চোখের ইতিহাস থাকলে শিশুরাও চোখ ট্যারা নিয়ে জন্মাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চোখের মাংশপেশির অসামঞ্জস্যতাই দায়ী।
এছাড়া চোখের পাওয়ার খুবই বেশি প্লাস কিংবা মাইনাস থাকলে, কোন কারণে এক চোখের দৃষ্টি বেশি কম থাকলে জন্মের পরও চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চশমা নেয়া বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে, তাহলে ট্যারা চোখ ভালো হবার সম্ভাবনা থাকবে।
বংশগত ট্যারা চোখে সাধারণত: ছোটবেলায় ২ চোখেই ভালো দেখার পাওয়ার থাকে। কিন্তু এক চোখ ট্যারা থাকার দরুন সেই চোখে দৃষ্টির ভালো উন্নতি সাধন হয় না। পরবর্তীতে ঐ চোখ অলস চোখ (ষধুু বুব) এ পরিণত হয়। সেইজন্য শিশুদের বেলায় যদি চোখের পাওয়ার ঠিক থাকে তাহলে অপারেশন এর মাধ্যমে চোখ সোজা করে নেয়া উচিত। যত অল্প বয়সে করবে তত দুই চোখের দৃষ্টির উন্নতি ভালো হবে। তবে সাধারণত: ৮ বছর বয়স হবার পূর্বেই চিকিৎসা বা অপারেশন করাতে হবে। এর পরে চিকিৎসা করলে আশানুরূপ দৃষ্টির উন্নতি সম্ভব নাও হতে পারে।

‘মরনিং গ্লোরি সিনড্রোম’ চোখের এক ধরনের জন্মগত ত্রটি। শিশু বয়সেই এ রোগ ধরা পড়ে। এই সিনড্রোমে চোখের ভেতরে অপটিক ডিস্ক দেখতে মরনিং গ্লোরি ফুলের মত মনে হয়। চোখের রেটিনার প্রায় কেন্দ্রভাগে রয়েছে অপটিক ডিস্ক। রেটিনা থেকে নার্ভগুলো একত্র হয়ে এই অপটিক ডিস্কে এবং অপটিক নার্ভ তৈরী হয়ে চোখ থেকে বেরিয়ে ব্রেনে যায়। এই নার্ভের মধ্য রক্তনালীগুলি একটি নিয়মের মধ্যে থাকে। মরনিং গ্লোরি সিনড্রোমে রক্তনালীগুলি অস্বাভাবিকভাবে সাইকেলের স্পোক এর মত বিস্তৃত থাকে। ঐ রক্তনালীসহ অপটিক ডিস্ক দেখতে ফুলের মত মনে হয়। চোখের এই সমস্যার সাথে সাধারণত শিশুদের নাক বোঁচা, চোখ ২টির বেশি দূরত্ব, ঠোঁট বাঁকা, ব্রেনের জন্মগত সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। এই ােগে বেশিরভাগ শিশু চোখে কম দেখে। সৌভাগ্যবশত: এই রোগের হার খুবই কম।

সাধারণত: বয়স ৩৫-৪০ বছর হলে অনেকেই নিকটে কম দেখতে শুরু করেন। তখন সহজেই এবং সস্তায় প্রাপ্য চশমার দোকান থেকে +১.০০ বা এর অধিক পাওয়ার এর চশমা কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন। ঐ চশমা দিয়ে বেশিরভাগ লোকই ভালো দেখতে পারেন এবং এতে চোখের কোন ক্ষতি হয় না। তবে ঐ ব্যক্তির জন্য শতকরা ১০০ ভাগ ঠিক পাওয়ার না মিললে- চোখের ব্যাথা সহ নানা উপসর্গ হতে পারে এবং চোখেও ১০০ ভাগ সঠিক দেখা যায় না।
যে সকল ব্যক্তির দূরের ও পাওয়ার থাকে বা বাকা পাওয়ার (ধংঃরমসধঃরংস) থাকে তাদের জন্য ঐ ‘রেডিমেড’ চশমা খুব ভালো কাজ করে না এবং আরামদায়কও হয় না। তাদের ক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রয়োজনীয় চশমা তৈরী করে নেয়া ভালো।

এইচ.আই.ভি নামক ভাইরাস দিয়ে এইডস (অপয়ঁরৎবফ ওসসঁহড়ফবভরপরবহপু ঝুহফৎড়সব) রোগ হয়। এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা কমিয়ে দেয়- শরীরে নানা প্রকার প্রদাহ ও জটিলতার শিকার হয়ে রোগী মারা যান। এই রোগে চোখেও মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। চোখের পাতায়, কর্ণিয়া ও কনজাংকটিভাতে ‘ক্যাপোসিস সারকোমা’ নামক টিউমার হতে পারে। এছাড়া চোখের কোটরে কর্ণিয়াতে, ইউডিয়াল টিস্যু এবং রেটিনাতে মারাত্মক প্রদাহ হতে পারে। চোখের বিভিন্ন প্রদাহ এবং রেটিনায় রক্তক্ষরণ ও সাদা সাদা এগজাস্ট জমে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যে সকল শিশুর চোখের কোন সমস্যা নেই, দেখার ও কোন সমস্যা নেই তাদের স্কুলে যাবার পূর্বে একবার পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ চোখের অনেক রোগই আছে যা বাবা মার নজরে নাও আসতে পারে। অনেক বড় হয়ে ঐ রোগ ধরা পড়লে- সঠিক চিকিৎসার সময় পার হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া যেসব শিশুর দেখতে সমস্যা হয়, নিকটে গিয়ে টিভি দেখে, চোখের পরিমাপ খুব ছোট বা বড় হলে, চোখের জন্মগত কোন ত্র“টি মনে হলে, চোখের মণিতে সাদা কোন দাগ মনে হলে, চোখ দিয়ে পানি পড়লে ইত্যাদি নানা সমস্যায়- যে কোন বয়সেই শিশুর চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

রক্তশূন্যতা হলে শরীরের অন্যান্য সমস্যার সাথে চোখেও জটিলতা হতে পারে, চোখ দেখতে অনেক ফ্যাকাসে মনে হবে। চিকিৎসকগণ রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া বোঝার জন্য চোখের পাতা উল্টিয়ে কনজাংকটিভার রং, রক্তের পরিমাণ, রক্তনালীর অবস্থা ইত্যাদি পরীক্ষা করে থাকেন। রক্তশূন্যতা হলে শরীর সকল রক্তনালীর মত চোখের ভিতরে ও বাইরের রক্তনালীগুলি ফুলে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়। চোখের বাইরের রক্তক্ষরণ বা সার কনজাংকটিভাল রক্তক্ষরণ সাধারণত দৃষ্টির কোন ক্ষতি করে না তবে চোখের ভেতরে- রেটিনার রক্তক্ষরণ বার বার হলে দৃষ্টিশক্তি অনেক কমে যেতে পারে। এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতার চিকিৎসা করালে চোখের জটিলতাও কমে যায় এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়।

এক চোখে দেখে গাড়ী চালানো গেলেও তা করা উচিত নয়। গাড়ী চালাবার সময় সোজাসুজি এবং পাশাপাশি দেখা, ঠিক রং দেখা, দৃষ্টির গভীরতা (ফবঢ়ঃয ড়ভ ঢ়বৎপবঢ়ঃরড়হ) থাকা, রাতে ঠিক দেখা ইত্যাদির প্রয়োজন। একটি চোখ না থাকলে বা একটি চোখে বেশি কম দেখলে ঐ সকল প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেজন্যে নিরাপদ ড্রাইভিং এর জন্য এক চোখে গাড়ী চালানো ঠিক নয়।
বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যবশত: অনেক গাড়ী চালক আছেন যারা এক চোখে দেখেন না। এদের গাড়ী চালাবার সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় চোখে তেমন কোন জটিলতা হয় না। রেটিনায় রক্তনালীর মাঝে মাঝে সংকোচন হবার ফলে রোগী হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঝাপসা দেখতে পারেন। যাকে ‘ব্লাক আউট’ বলা হয়। ঠিকমত বিশ্রাম ও দুর্বলতার ওষুধ খেলে এ অবস্থার উন্নতি হয়। তবে গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ একলানসিয়া হলে অনেক সময় চোখে সমস্যা হতে পারে। রোগীর বয়স কম থাকায় উচ্চ রক্তচাপে চোখের রক্তনালীর অনেক পরিবর্তন হয়, রক্তনালীর প্রসারণ হয়ে রক্তক্ষরণ ও পানি জাতীয় পদার্থ নির্গত হয়। অনেক পানি জমে গেলে- এক ধরনের রেটিনার ডিটাচমেন্ট হতে পারে। চোখে এ জাতীয় জটিলতা দেখা গেলে এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিলে নির্ধারিত তারিখের পূর্বের ‘সিজারিয়ান সেকশন’ অপারেশন এর মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো উচিত। বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে চোখের জটিলতাগুলি কমে যায়।

হ্যাঁ। চশমা বানাবার পর আবারো তা পরীক্ষা করানো উচিত। চশমা আসলে একটি জটিল বিষয়। চশমা দেবার সময় কম্পিউটারে চক্ষু পরীক্ষা বা ম্যানুয়াল চক্ষু পরীক্ষা করে আবার রোগীকে অক্ষর পড়িয়ে পাওয়ার কনফার্ম করা হয়। ঐ পাওয়ারটি চশমার প্রেসক্রিপশনে লেখা হয়। চশমার দোকানে ঐ প্রেসক্রিপশন দেখে পাওয়ার তৈরী করেন এবং ফিটিং এর জন্য পাঠান। সুতরাং এতগুলো ধাপ পার হয়ে আসার সময় কোথাও কোন ভুল হলো কিনা সেটা দেখার জন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা তাঁর কোন সহযোগী পাওয়ার মাপার যন্ত্র ‘লেন্সমিটার’ এ পরীক্ষা করা উচিত।

 

উচ্চ রক্তচাপ অনেকদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত থাকলে যেমন হার্টে, ব্রেনে, কিডনিতে জটিলতা হতে পারে- তেমনি চোখেও নানা জটিলতা হতে পারে। অল্পবয়স্ক রোগী, গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে- হঠাৎ করে ‘ব্লাক আউট’ হতে পারে। সাধারণত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের দেখা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই বয়সে রেটিনার রক্তনালী সংকোচন ও প্রসারণ হবার ফলে ব্লাক আউট হয়ে থাকে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্তনালীগুলি তুলনামূলক শক্ত হয়ে যায়- চিকন হয়ে যায়। রেটিনার রক্তনালী থেকে খুব ধীরে ধীরে পানি, চর্বি জাতীয় পদার্থ, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি।’ বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী এই রেটিনোপ্যাথির বর্ণনা করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়। উচ্চ রক্তচাপে- চোখের জটিলতা হলে- প্রথমেই রক্তচাপ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চোখের রংগীন ছবি এবং অ্যান্থিওগ্রাফী (ঋঋঅ) করে প্রয়োজনে লেজার চিকিৎসা করতে হবে।

অনেকেই মনে করেন- চশমা একবার পরলে আর ছাড়া যায় না। আসলে কার চশমা লাগবে, কখন ছাড়া যাবে- এসবই নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির পাওয়ার এর উপর। অনেক শিশু ছোটবেলায় মাথা ব্যথার জন্য সামান্য পাওয়ার দেয়া হয়। কিছুদিন ব্যবহারের পর তা নাও লাগতে পারে। অনেক শিশুর ছোটবেলায় প্লাস পাওয়ার লাগতে পারে, বড় হতে হতে তার ঐ পাওয়ার আর নাও লাগতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে গিয়ে ধরা পড়ে- দূরে ব্লাকবোর্ড দেখতে পাচ্ছে না। এদেরকে মাইনাস পাওয়ার দেবার প্রয়োজন হয়। এরা যত বড় হবে- শরীরের সাথে সাথে চোখের আয়তনও বড় হয়। তখন চোখের পাওয়ারও স্বাভাবিক এর তুলনায় বেড়ে যায়। এদেরকে তখন ভালো দেখতে গেলে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া পাওয়ার মাইনাস করতে হয় এবং চশমা অনেকদিন পড়ার প্রয়োজন হয়। শিশু হোক বা বড় হোক, চোখ পরীক্ষা করে পাওয়ার এর প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে চোখের রেটিনার উন্নতি হবে না এবং ৬/৬ দৃষ্টি তৈরী হবে না।

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করে এবং নিয়ম মেনে চললে কন্টাক্ট লেন্স চোখের জন্য ক্ষতিকর নয়। আমাদের দেশে অনেকেই আছেন উপযুক্ত পরীক্ষা না করেই চশমার দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে ব্যবহার করেন এবং অনেক সময় নানা সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য আসেন। ধরা যাক একজন রোগীর চোখের পানির পরিমাণ কম। তাকে পরীক্ষা না করেই দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স দেয়া হলো। ২/১ দিনের মধ্যেই ঐ রোগীর চোখে কর্ণিয়ায় আলসার বা ক্ষত হয়ে যাবে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে দৃষ্টির ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আজকাল অনেক উচ্চ পানি ধারণ ক্ষমতাসহ কন্টাক্ট লেন্স পাওয়া যায় যা চোখের জন্য আরামদায়ক। এছাড়া কিছু ডিসপোজঅ্যাবল কন্টাক্ট লেন্স আছে যা মাত্র ১-২ মাস ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়- যার ফলে চোখের কোন জটিলতা হয় না বললেই চলে।

চোখ তুলে ফেলার পর কোন কৃত্রিম চক্ষু সংযোজন ব্যবস্থা এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নাই। চক্ষু সংযোজন বলতে শুধুমাত্র কর্ণিয়া সংযোজন করে বর্তমানে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চোখের কৃত্রিম লেন্স আবিস্কার- ছানি চিকিৎসায় যেমন যুগান্তকারী এবং অভাবনীয় উন্নতি তেমনি কৃত্রিম কর্ণিয়া ও কৃত্রিম চোখ আবিস্কার এর উপর প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। কৃত্রিম লেন্স আবিস্কার এর মত কৃত্রিম কর্ণিয়া ও চোখ আবিষ্কারও একদিন মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে।

সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সগুলি দিনের বেলা চোখে পরা হয় এবং রাত্রে ঘুমের পূর্বে নির্দিষ্ট কেসের মধ্যে খুলে রাখা হয়। লেন্সের প্রকারভেদে ১২-১৬ ঘন্টা পর্যন্ত এই লেন্স পরে থাকা যায়। এক্সটেন্ডেড ওয়ার কন্টাক্ট লেন্স (ঊীঃবহফবফ বিধৎ পড়হঃধপঃ ষবহং) নামে এক ধরনের কন্টাক্ট লেন্স পাওয়া যায়- যাতে পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। এসব কন্টাক্ট লেন্স একবার চোখে লাগিয়ে ৭-১৪ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। এর বেশি রাখলে চোখের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। ১-২ সপ্তাহ পর ঐ লেন্সগুলি ফেলে দিতে হয় বলে বছরে অনেক সংখ্যক কন্টাক্ট লেন্স এর প্রয়োজন হয় এবং লেন্সের মূল্যও অনেক বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এই জাতীয় লেন্সের ব্যবহার অনেকটা সীমিত। চোখের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে ডেইলি ওয়ার লেন্স বা দৈনিক রাত্রে খুলে রাখার লেন্সই ভালো।

 

চোখে আঘাতজনিত কারণে কিংবা শরীরের কয়েকটি রোগে বিশেষ করে ডায়াবেটিসে চোখের ৩য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ ক্রানিয়াল নার্ভ এর প্যারালাইসিস হতে পারে। এ সকল নার্ভ এর কাজ হচ্ছে চোখকে খুলে রাখা এবং ডানে, বামে, উপরে নিচে ঘোরানো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি নার্ভই প্যারালাইসিস হয় এবং সেই নার্ভের যে মাংশপেশি তা অকার্যকর হয়। যেমন ৬ষ্ঠ নার্ভ প্যারালাইসিস হলে চোখ বাইরের দিকে ঘুরতে পারে না। ৩য় নার্ভ প্যারালাইসিস হলে চোখের উপরের পাতা পড়ে যায়, নাকের দিকে ঘোরে না, উপরে তাকাতে সমস্যা হয়। কোন কোন সময় এই ৩টি নার্ভ একত্রে প্যারালাইসিস হয়ে চোখের সকল গতিচাঞ্চল্য কমিয়ে দেয়। এই নিশ্চল চোখকে বলা হয়- টোটাল অফথ্যালমোপ্লেজিয়া। ডায়াবেটিসের কারণে চোখের পক্ষাঘাত হলে তা ৩-৬ মাসের মধ্যে সাধারণত: আবার ভালো হয়ে যায়। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে অবশ্য উন্নতি হতে দেরি হয়।

সাধারণ কন্টাক্ট লেন্সের উপরেই এক ধরনের রং করেই রঙিন কন্টাক্ট লেন্স তৈরী করা হয়ে থাকে। যেহেতু রং একটি কেমিক্যাল, এ জন্যে অনেকের চোখে ঐ রং এর জন্য এলার্জি বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যারা সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য রঙিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য প্রথম কয়েকদিন ট্রায়াল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন সমস্যা না হলে তখন ঐ ব্রান্ডের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের চোখে পাওয়ার আছে তাদের জন্য প্রথমে সাধারণ কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে- ২য় ধাপে রঙিন + পাওয়ার-কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ণান্ধ বা কালার ব্লাইন্ড জন্মগত চোখের ত্র“টি। এই রোগে দুই চোখই আক্রান্ত হয় এবং কোন চিকিৎসা নেই।
জন্মগত কালার ব্লাইন্ড দুই প্রকার হতে পারে।
ক) আংশিক বা পারসিয়াল কালার ব্লাইন্ড। এই প্রকার রোগীরা লাল, সবুজ কিংবা নীল রং চিনতে পারেন না। এর মধ্যে সবুজ কালার ব্লাইন্ডই বেশি দেখা যায়।
খ) পুরাপুরি বা টোটাল কালার ব্লাইন্ড- এই প্রকার রোগীরা কোন প্রকার রংই চিনতে পারেন না এবং সব কিছুই ধুসর দেখেন। সৌভাগ্যবশত: এই প্রকার কালার ব্লাইন্ড এর সংখ্যা সবচেয়ে কম।
জন্মগত কালার ব্লাইন্ড ছাড়াও অনেক অসুখে এবং কয়েকটি ওষুধ সেবনের ফলে চোখের অপটিক নার্ভ ও ম্যাকুলার পরিবর্তন হয়েও বর্ণান্ধ হতে পারে।

অল্প আলোতে পড়লে চোখের কোন ক্ষতি হয় না। তবে কোন কিছু দেখা না গেলে, জোর করে পড়ার চেষ্টা করলে চোখের উপর চাপ পড়ে বা আইস্ট্রেন হয়। কিছুক্ষণ এভাবে পড়লে মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা হতে পারে। সুযোগ থাকলে স্বাভাবিক আলোতে পড়াশুনা করাই শ্রেয়।

 

হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই লাগতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি নিকট দৃষ্টি বা মায়োপিয়া থাকে তাহলে আপনার ছেলেমেয়ে কারও কারও ঐ একই সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি এমন কোন মেয়ে বিয়ে করেন যার আপনার মতই চশমা লাগে কিংবা আপনার বংশের কাউকে বিয়ে করেন তাহলে আপনাদের ছেলেমেয়েদের চশমা লাগার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।

 

যখন একটি সুস্থ্য চোখে চশমা দিয়ে বা কন্টাক্ট লেন্স এর সাহায্যে ভালো দেখা যায় না তখন তাকে অলস চোখ  (ষধুু বুব) বলা হয়। সাধারণত: শিশুর ৭ বছর বয়সের পূর্বে যদি চোখ ট্যারা থাকে, ছানি থাকে, শক্তিশালী চোখের পাওয়ার থাকে বা অন্য কোন কারণে চোখে সঠিকভাবে আলো প্রবেশ করতে না পারে তাহলে ঐ চোখের রেটিনার সঠিক বিকাশ লাভ সম্ভব হয় না। এবং চোখ অলস হয়ে যায়। অনেক শিশু মনে করে- হাত যেমন একটিই বেশি শক্তিশালী (যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডান হাত) তেমনি চোখের দেখাও একটিতে ভালো দেখা যাবে- অন্যটিতে কম দেখা যাবে। এ কারণে তারা দেখার সমস্যার কথা পিতা-মাতাকে বলে না। এসব কারণে- কোন সমস্যা না থাকলেও স্কুলে ভর্তির সময় সকল শিশুর চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

অনেক শিশুদের জন্মের পর থেকে বা কয়েকদিন পর থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে। কখনও আবার পানির সাথে ময়লাও আসে। চোখের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ল্যাকরিমাল ও অতিরিক্ত ল্যাকরিমাল গ্রন্থি হতে চোখের পানি তৈরী হয়ে তা চোখের উপরে আসে এবং চোখকে সতেজ রাখে। এই পানি চোখের পাশে নাকের দিকে ২টি ছিদ্র বা পাংটাস দিয়ে ন্যাসোল্যাকরিমাল ডাক্ট বা নেত্রনালীর মধ্য দিয়ে নাকে প্রবেশ করে। সাধারণত: মায়ের গর্ভেই শিশুদের ঐ নেত্র নালী সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে যায়। কোন কোন নবজাতক এর নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই ভূমিষ্ট হবার কারণে বা অন্য কোন কারণে ঐ নালী সম্পূর্ণ তৈরী হয় না। এর ফলে চোখের পানি নাকে বেরিয়ে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়ে চোখ দিয়েই পড়ে। নিয়মানুযায়ী প্রায় ৯৫ ভাগ এরকম শিশুর নালী এক বছর বয়সের পূর্বেই তৈরী হয়ে যায় এবং পানি পড়া ভালো হয়ে যায়। তবে চোখের পাশে চাপ দিলে বা ম্যাসেজ করে এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। মাত্র ১-৫ শতাংশ শিশুর জন্য প্রবিং বা নেত্রনালীর শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

রক্তের যেমন চাপ আছে তেমনি চোখেরও একটি নির্দিষ্ট চাপ রয়েছে। চোখের চাপ ১০-২০ মি.মি. মারকারী। কোন কারণে চোখের চাপ বেড়ে গেলে চোখের অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয় এবং খুব ধীরে ধীরে নার্ভটি শুকিয়ে যায়, দৃষ্টির পরিসীমা কমতে কমতে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এ রোগের মারাত্মক দিক হচ্ছে- রোগটি উপসর্গহীন এবং অপরিবর্তনীয়। একবার অন্ধত্ব হয়ে গেলে তা ভালো করা যায় না।
গ্লকোমার অনেক প্রকারভেদ আছে। উপরে বর্ণিত গ্লকোমাকে বলা হয় প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমা (ঢ়ৎরসধৎু ড়ঢ়বহ ধহমষব মষধঁপড়সধ- চঙঅএ) এছাড়া প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমা (চৎরসধৎু অহমষব পষড়ংঁৎব এষধঁপড়সধ-চঅঈএ) স্বাভাবিক চাপ গ্লকোমা (ঘড়ৎসধষ ঃবহংরড়হ এষধঁপড়সধ) সেকেন্ডারী গ্লকোমা (ঝবপড়হফধৎু এষধঁপড়সধ) জন্মগত গ্লকোমা ইত্যাদি নানা ধরনের গ্লকোমা রোগ আছে।
গ্লকোমা যেহেতু সাধারণত: ২ চোখেরই রোগ সেজন্যে এক চোখে সমস্যা দেখা গেলেও অন্য চোখেরও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ গ্লকোমা সন্দেহ করলে চোখের চাপ, চোখের ভিতরে অপটিক নার্ভ, দৃষ্টি পরিসীমা (ঠরংঁধষ ঋরবষফ অহধষুংরং) ইত্যাদি কয়েকটি প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। প্রয়োজন হলে আরো কয়েকটি আধুনিক ইমেজিং পরীক্ষা যেমন ও.সিটি, এইচ.আর.টি. প্যাকিমেট্রি, ফান্ডাস ফটোগ্রাফি, ইউ.বি.এম ইত্যাদি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
বিভিন্ন ধরনের গ্লকোমার উপসর্গ এবং চিকিৎসারও তারতম্য রয়েছে। চক্ষু ও গ্লকোমা বিশেষজ্ঞ এই রোগটির বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে চোখের ফোটা ওষুধ, খাবার ওষুধ, চোখের লেজার কিংবা অপারেশন বা সবগুলি একত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে ততটাই চোখের অপটিক নার্ভের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। রোগটির বুঝবার জন্য রোগীকে গ্লকোমা রোগ সম্পর্কে বই, পত্র পত্রিকা বা ইন্টারনেটে পড়তে হবে।

চোখের উপরের পাতা অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেলে বা ঝুলে পড়লে তাকে বলা হয়- টসিস। এই সমস্যাটি জন্মগত হতে পারে তবে বেশিরভাগ সময়ে জন্মের পরে স্নায়ুজনিত দুর্বলতা, মাংশপেশীর দুর্বলতা বা অন্য কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস সহ কয়েকটি রোগে ৩য় ক্রানিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস হলে চোখের উপরের পাতা পড়ে যায়। বয়স্কদের পাতার দুর্বলতার জন্য পাতা পড়ে যায় বা চোখ ছোট হয়ে যায়। মাইয়েসথেনিয়া গ্রাভিস সহ কয়েকটি মাংশপেশীর রোগে ও চোখের উপরের পাতা এমনকি নিচের পাতাও পড়ে যায়। চোখের উপরের পাতায় কোন টিউমার বা অঞ্জনী হলেও মেকানিক্যাল টসিস হতে পারে। টসিসে চোখের মণি পুরা ঢেকে যেতে পারে কিংবা আংশিক ঢেকে যেতে পারে। পুরা ঢেকে গেলে টসিসের কারণ-এর চিকিৎসা করতে হবে। জন্মগত টসিস দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণ টসিস থাকলে কিংবা সৌন্দর্য বর্ধন এর জন্য টসিসের শল্য চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়।

চোখের ভেতরে একটি লেন্স থাকে- যার সাহায্যে আলোকে ফোকাস করে রেটিনায় পতিত হয় এবং আমরা দেখতে পারি। এই লেন্স এবং লেন্সের আবরণ (ক্যাপসুল) যদি বয়সজনিত কারণে প্রদাহ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোন রোগের কারণে বা আঘাতে ঘোলা হয়ে যায়- তাকে চোখের ছানি বলে। সামান্য ঘোলা হলে তাকে অপরিপক্ক ছানি (ওসসধঃধৎব পধঃধৎধপঃ) বলা বলা হয় এবং পরিপুর্ণ ঘোলা হলে- পক্ক ছানি (গধঃঁৎব ঈধঃধৎধপঃ) বলা হয়।
চোখের ছানির প্রধান কারণ- বয়সজনিত। এই প্রকার ছানিকে বলা হয় সেনাইল ক্যাটারাক্ট।
প্রথম অবস্থায় এই ছানি পড়লেও চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করা সম্ভব, কিন্তু একটি সময়ে তাও সম্ভব হয় না। তখন অপারেশন এর মাধ্যমে ঐ ঘোলা লেন্সটির অপসারণ করে কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়।
কোন ওষুধের মাধ্যমে ছানিকে সরানো যায় না। সুতরাং অপারেশনই হল চোখের ছানির একমাত্র চিকিৎসা। তবে অপারেশন এবং কৃত্রিম লেন্সের মধ্যে অনেক প্রকারভেদ রয়েছে।

ফ্যাকো শব্দটি ইংরেজী চযধপড়বসঁষংরভরপধঃরড়হ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ফ্যাকোইমালসিফিকেশন শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে লেন্স গলানো। অর্থাৎ ছানি অপারেশনে যে পদ্ধতিতে চোখের লেন্সকে টুকরো টুকরো করে- গলিয়ে অপসারণ করা হয় সেটাই হলো ফ্যাকো সার্জারী।
আমাদের চোখের লেন্স এর পরিমাপ প্রায় ৯ মিলিমিটার। সুতরাং সাধারণ অপারেশনে (ঊীঃৎধ পধঢ়ংঁষধৎ পধঃধৎধপঃ ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ঊঈঈঊ) চোখের পাশে প্রায় ৯ মিলিমিটার কেটে ঐ লেন্সটি একবারেই বের করা হয় এবং পরে একটি শক্ত কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়। যেহেতু অনেক বেশি কাটা হয়- সেজন্যে এখানে ৫-৭ টি সেলাই দেবার প্রয়োজন হয়।
ফ্যাকো সার্জারী বর্তমানে চোখের ছানি অপারেশন এর আধুনিক পদ্ধতি। এখানে চোখের পাশে ২-৩ মিমি আকারে একটি টানেল করা হয় এবং ফ্যাকো মেশিনের সাহায্যে ঐ ৩ মি.মি. ছিদ্র এর মধ্য দিয়ে লেন্সটিকে ৪ থেকে ৮ টুকরা করা হয় এবং তা গলিয়ে অপসারণ করা হয়। এরপর একটি নরম লেন্স বা ভাজ করা যায় এমন কৃত্রিম লেন্স (ঋড়ষফধনষব ওঙখ) সঠিক অবস্থানে সংযোজন করা হয়ে থাকে। ছিদ্রটি খুব ছোট বিধায় এখানে সেলাই করার প্রয়োজন হয় না। চোখের ভেতরের স্বাভাবিক চাপেই ঐ ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে যায় এবং সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
ফ্যাকো সার্জারীর পর রোগী হাটাচলা করতে পারেন, এ জন্যে আজকাল ফ্যাকো সার্জারী করে রোগীরা বাড়ী চলে যেতে পারেন।
এই অপারেশনে ক্ষত খুব সামান্য হয় বিধায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষত শুকাতে সময় কম লাগে।
ফ্যাকো সার্জারীর একটি অসুবিধা হচ্ছে ছানি বেশি পেকে গেলে বা লেন্সটি বেশি শক্ত হয়ে গেলে মেশিনের সাহায্যে লেন্সটি গলানো কঠিন হয় এবং জটিলতার হার বেড়ে যায়। সেজন্যেই কেউ ফ্যাকো সার্জারী করার চিন্তা করলে লেন্স বেশি শক্ত হবার আগেই তা করানো উচিত।

‘কৃত্রিম লেন্স’ নানা প্রকার পাওয়া যায়। শক্ত কৃত্রিম লেন্স পি.এম.এম.এ নামক পদার্থ দিয়ে তৈরী হয়। নরম কৃত্রিম লেন্স সাধারণত: অ্যাকরাইলিক বস্তু দিয়ে তৈরী হয়। কিছু লেন্স আছে হাইড্রোফোবিক আবার কিছু হাইড্রফিলিক। এসব গুণাবলীর কারণে লেন্সের মূল্যেরও অনেক পার্থক্য হয়।
ই.সি.সি.ই বা এসআইসিএস পদ্ধতিতে ছানি অপারেশন করলে শক্ত কৃত্রিম লেন্স দেয়া হয়। এই লেন্সগুলোর দাম কম, অপারেশন-এর খরচও তুলনামূলক কম। ফ্যাকো সার্জারী করলে অপারেশন এর ৩ মি.মি. ছিদ্র দিয়েই ভাজ করা যায় এমন নরম লেন্স বিশেষ ধরনের ইনজেকটার দিয়ে চোখে প্রবেশ করানো হয়। এতে করে প্রাথমিক ছিদ্র আর বড় করতে হয় না। ফ্যাকো সার্জারী করে শক্ত লেন্স দিতে চাইলে ছিদ্রটিকে অবশ্যই লেন্সের সমান আকারে বড় করে নিতে হবে। এতে অবশ্য ফ্যাকো সার্জারীর সুবিধা অনেকটা ব্যহত হবে।
চোখের লেন্স কয়েক বছর চোখে থাকলে- লেন্সের পেছনের পর্দা আবার কিছুটা ঘোলা হয়ে যেতে পারে। তখন ইয়াগ লেজারের সাহায্যে ঐ ঘোলা পর্দার কেন্দ্রটি কেটে পরিস্কার করতে হয়। হাইড্রোফোবিক নরম লেন্স ব্যবহার করলে পর্দা ঘোলা হবার হার অনেক কমে যায়।
উপরে বর্ণিত সব লেন্সই মোনোফোকাল লেন্স। অর্থাৎ অপারেশন এর পর রোগী দূরে বা কাছে ভালো দেখবেন। দূরে ভালো দেখলে- কাছে দেখার জন্য রিডিং গ্লাস বা চশমা পরতে হবে। এক প্রকার কৃত্রিম লেন্স এখন পাওয়া যায়- যার নাম ‘মাল্টিফোকাল কৃত্রিম লেন্স। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই লেন্স সংযোজন করলে রোগী দূরে ও কাছে ভালো দেখবেন এবং সাধারণত: শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর কোন চশমার প্রয়োজন হয় না।

চোখের এলার্জি হলে অনেকেই চোখে খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা পানি ওষুধ-এর মত ভালো কাজ করে না তবে এতে কোন ক্ষতি নেই। চোখের এলার্জি হলে চোখ লাল হয়, চোখের রক্তনালীগুলি বড় হয় ও ফুলে যায়। ঠান্ডা পানি চোখে দিলে ঐ রক্তনালীগুলি কিছুটা সংকোচন হয়, ফলে লাল কমে যেতে পারে এলার্জিক বস্তুর নিঃসরণ কমে যেতেপারে। এতে রোগীর উপসর্গ অনেকটাই কমে যেতে পারে এবং চোখে আরাম অনুভূত হতে পারে।

চোখকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখার জন্য প্রয়োজন চোখের পানি। চোখের কোটরে অবস্থিত প্রধান ল্যাকরিমাল গ্লান্ড ও চোখের অতিরিক্ত ল্যাকরিমাল গ্লান্ড থেকে এই পানি তৈরী হয়ে চোখের উপরের অংশকে সব সময় ভেজা ও মসৃণ রাখে। কোন কারণে চোখের পানি তৈরী কম হলে কিংবা এই পানির গুণগত মান এর পরিবর্তন হলে চোখ শুকিয়ে যায়। এছাড়া চোখে এসিড বা চুন পড়লে, কয়েকটি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, চোখের আঘাত আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে অনেকক্ষণ থাকলে, খাবার অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চোখের পানি কমে যেতে পারে এবং চক্ষুশুষ্কতা হতে পারে। চক্ষু শুষ্কতার চিকিৎসা বেশ জটিল। অনেক রোগীকেই সারা জীবন চিকিৎসা করতে হয়। যেসব ক্ষেত্রে শুষ্কতার কারণ জানা সম্ভব সেখানে কারণগুলির প্রতিরোধ বা প্রতিকার করে চোখের কৃত্রিম পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চক্ষু শুষ্কতার কারণ বোঝা যায় না। সেক্ষেত্রে ঘনঘন চোখের কৃত্রিম পানি- ফোটা ওষুধ ব্যবহার করলে চোখের কষ্ট লাঘব হবে এবং আরাম অনুভূত হবে।

ডায়াবেটিস রোগ চোখে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎনা না হলে ডায়াবেটিস জটিলতায় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখের প্রায় সকল অংশই ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- ঘন ঘন চোখের পাতার ইনফেকশন, কর্ণিয়ায় ক্ষত, চোখের পানির গুণগত পরিবর্তন, চোখের পাওয়ার এর ঘন ঘন পরিবর্তন, অল্পবয়সে চোখে ছানি পড়ে যাওয়া, গ্লকোমা বা চোখের প্রেসার রোগের হার বেড়ে যাওয়া, অপটিক নার্ভ শুকিয়ে যাওয়া, রেটিনায় ও ভিট্রিয়াস এ রক্তক্ষরণ হয়ে রেটিনার ডিটাচমেন্ট বা এক ধরনের জটিল গ্লকোমা-নিওভাসকুলার গ্লকোমা হতে পারে। অপটিক স্নায়ু ও রেটিনার জটিলতায় রোগীরা আস্তে আস্তে দৃষ্টি হারাতে থাকেন এবং এসময় লেজার এর সাহায্যে রেটিনার চিকিৎসা না করালে সাধারণত রোগী অন্ধ হয়ে যান।

চোখ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে সব সময় নড়তে থাকে তাকে ‘নিসটাগমাস’ বলা হয়। যারা চোখে ভালো দেখেন না, চোখের জন্মগত কয়েকটি ত্র“টিতে, কানের কোন ত্র“টি থাকলে এরকম চোখ নড়ার সমস্যা দেখা যায়। এদেরকে বলা হয় প্যাথোলজিক্যাল নিসটাগমাস। সাধারণ সুস্থ শিশুরা সর্বোচ্চ বাইরের দিকে তাঁকায় বা কেউ যদি ট্রেনের মধ্যে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন- তখনও চোখ নড়ে। এ অবস্থাকে বলা হয় ফিজিওলজিক্যাল নিসটাগমাস। প্যাথলজিক্যাল নিসটাগমাসের কারণ খুঁজে সম্ভব হলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তাতে চোখে দেখার কিছু উন্নতি হতে পারে, কিন্তু চোখ নড়ার তেমন উন্নতি হয় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিসটাগমাস এর প্রবণতা ও হার অনেকটাই কমে যায়।

একটা বস্তুতে ২টি করে দেখলে তাকে বলে ডবল ভিশন বা ডিপলোপিয়া। যদি দুই চোখ খোলা থাকলে ২টি করে দেখা যায় তাকে বাইনোকুলার ডিপলোপিয়া বলা হয়। যদি এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ ২টি করে দেখা যায় তাকে বলা হয় ইউনিকুলার ডিপলোপিয়া। চোখের ছানির প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকেই চাঁদ, তারা দুইটি করে দেখার কথা বলে থাকেন। ডায়াবেটিস সহ নানা অসুখে চোখের মাংশপেশী বা স্নায়ুর দুর্বলতা, চোখের টিউমার ইত্যাদি নানা কারণে বাইনোকুলার ডিপলোপিয়া হতে পারে। ট্যারা চোখেও ডিপলোপিয়া হতে পারে। কারণ দূরীভূত করে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে এ ধরনের ডিপলোপিয়া ভালো হতে পারে। নার্ভ প্যারালাইসিস যদি ভালো না হয় এবং ডিপলোপিয়া দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে চোখে শল্য চিকিৎসা করার প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগে চোখের মারাত্মক জটিলতা যেমন- রেটিনার রক্তক্ষরণ হলে বা রেটিনার রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলেই লেজার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। লেজার শব্দের অর্থ – খরমযঃ অসঢ়ষরভরপধঃরড়হ নু ংঃরসঁষধঃবফ ঊসরংংরড়হ ড়ভ জধফরধঃরড়হ. লেজার রশ্মির সাহায্যে আলোক শক্তিকে চোখের পিগমেন্টস এর সাথে শোষণ করিয়ে তা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। চোখের রেটিনার বা অন্য কোন স্থানে এই লেজার এর সাহায্যে যে দাহ করা হয় তাকে বলে থেরাপিউটিক বার্ন। সুতরাং লেজার একটি ধ্বংসাত্মক চিকিৎসা পদ্ধতি। ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার যে সকল জায়গায় রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা হয় সেখান থেকে অপরিকল্পিত নতুন রক্তনালী তৈরীর সম্ভাবনা থাকে ও চোখের ভেতরে রক্তপাত ঘটায়। সুতরাং লেজার এর সাহায্যে ঐ এলাকায় বার্ন করা হলে সেখান থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কমে যায় এবং নতুন জটিলতার সম্ভাবনা কমে যায়। সুতরাং ডায়াবেটিসে লেজার করলে চোখের বর্তমান দেখার উন্নতি নাও হতে পারে কিন্তু ভবিষ্যতের আরো মারাত্মক জটিলতা থেকে প্রতিরোধ করে বা অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করে।

আমাদের দেশে অন্ধত্বের ২য় প্রধান কারণ চোখের কর্ণিয়ার আলসার বা চোখের ক্ষত। সাধারণত: গ্রামাঞ্চলে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কর্ণিয়ার আলসার এর হার বেশি। কৃষি মৌসুমে কৃষকদের চোখে আলসার হয় অনেক বেশি। জীবাণুর প্রকারভেদে- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াল ও ফাংগাল কর্ণিয়ার আলসার হতে পারে। সঠিক সময়ে ও সঠিক চিকিৎসা না হলে এই আলসার থেকে চোখের ব্যাপক সংক্রমন ও প্রদাহ হয়ে যায় এবং অনেক সময় চোখের যন্ত্রণা কমাতে চোখ তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়। সুতরাং কারও চোখে হঠাৎ করে অস্বস্থি, পানি পড়া, রোদে বা আলোতে তাকাতে অসুবিধা হওয়া, চোখে কম দেখা ইত্যাদি উপসর্গ হলে জরুরীভাবে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। জটিল কর্ণিয়ার আলসার রোগের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জীবাণু পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মধ্যে টিউমার বা রক্তক্ষরণ হলে চোখের পরীক্ষায় তাঁর উপসর্গ ধরা পড়ে। এ জন্যেই চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ প্রথম মস্তিষ্কের টিউমার সন্দেহ করে নিউরোলজিস্ট বা নিউরোসার্জনদের নিকট রেফার করেন। মস্তিষ্কে কোন টিউমার হলে বা রক্তক্ষরণ হলে তা সরাসরি অপটিক নার্ভ থেকে ব্রেন পর্যন্ত চোখের দেখার গতিপথে চাপ পড়তে পারে এবং রোগীর দৃষ্টির কিংবা দৃষ্টির পরিসীমার মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে। চোখের স্নায়ুতে চাপ পড়ে চোখ বাঁকা হয়ে যেতে পারে। চোখের ভেতরে কিংবা বাইরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ব্রেনের মধ্যে চাপ বেড়ে গেলে- চোখের অপটিক নার্ভের মুখে, পানি জমতে পারে- যাকে বলা হয় প্যাপিলোইডিমা। এরকম নানা উপসর্গ দেখে চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ ব্রেনের টিউমার বা রক্তক্ষরণ বুঝতে পারেন।

লেজার একটি ইংরেজী শব্দ খঅঝঊজ যা খরমযঃ অসঢ়ষরভরপধঃরড়হ নু ংঃরসঁষধঃবফ জধফরধঃরড়হ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। লেজার এর সাহায্যে শরীরের নানা রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। চোখের নানা রোগ ও কয়েকটি রোগের জটিলতায় লেজার রশ্মির ব্যবহার হচ্ছে। লেজার নানা ধররে এবং এদের কার্যকারিতাও ভিন্ন। চোখের জন্য আরগন লেজার, ডায়ড লেজার, ইয়াগ লেজার, এক্সাইমার লেজার ইত্যাদি ব্যবহার হয়ে থাকে। আজকাল পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায় চশমার পরিবর্তে ল্যাসিক করুন। ল্যাসিক ও এক ধরনের লেজার যা এক্সাইমার লেজার এর সাহায্যে করা হয়ে থাকে। যাদের চোখে পাওয়ার আছে- এই লেজার এর সাহায্যে তা কমিয়ে শূন্য করা সম্ভব। ২০-৪০ বছর বয়সী রোগীদের জন্য এই পদ্ধতি বেশি সফল। ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে চোখের অন্ধত্ব প্রতিরোধে আরগন লেজার বা ডায়ড লেজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গ্লকোমা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য আরগন লেজার, ইয়াগ লেজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সাধারণ সাজসজ্জার অংশ হিসেবে মহিলাদের অনেকেই চোখে নানা ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকেন। কসমেটিক্স ব্যবহারের ফলে অনেকের চোখের পাতা ফুলে যায়, চুলকায়, চোখ লাল হয় এবং পানি পড়ে। এগুলো ব্যবহার না করলে বা বন্ধ করলে সকল উপসর্গ কমে যায়। বেশিরভাগ কসমেটিক্সই এক জাতীয় কেমিক্যাল। সুতরাং অনেকের বেলায় এ থেকে চক্ষু এলার্জি বা চর্মের এলার্জি হতে পারে। এসকল সমস্যা হলে প্রাথমিকভাবে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে কসমেটিক্স এর ব্রান্ড পরিবর্তন করা কিংবা ঐ কসমেটিক্স ব্যবহার বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে।

বাহ্যিক চোখের কোন রোগ ছাড়াই যদি কেউ হঠাৎ করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিছু দেখতে না পান বা ‘ব্লাক আউট’ হয় তার নাম “অ্যামোরোসিস ফিউগাক্স’ (Amaurosis Fugax)। অনেকক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ উঠে দাড়ালে, পাইলটদের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চতায় উঠে গেলে এরকম ব্লাক আউট হতে পারে। এছাড়া মাইগ্রেন, রেনডস ডিজিজ, গর্ভবতী অনেক মায়েদের চোখের রেটিনার রক্তাল্পতা হয়ে এরকম ‘ব্লাক আউট’ হতে পারে।

জীবনে কোনও সময়ে হঠাৎ করে এক চোখে বা ২ চোখে না দেখতে পেলে- সম্পূর্ণ চক্ষু পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে- কারণ চোখের নানা কারণে এ ধরনের উপসর্গ হতে পারে। যেমন- শিশুদের ক্ষেত্রে অপটিক নার্ভের অসুখ- ডেডিকস ডিজিজ, অপটিক নিউরাইটিস। বড়দের ক্ষেত্রে যে কোন কারণে চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ, রেটিনার ডিটাচমেন্ট, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া, অপটিক নিউরাইটিস, গ্লকোমা, অপটিক নার্ভ এর সেন্ট্রাল ধমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া- ইত্যাদি নানা কারণে হঠাৎ করেই চোখে দেখা না যেতে পারে। এসব কারণের বেশিরভাগই চিকিৎসা করা সম্ভব। সুতরাং যে কোন কারণে হঠাৎ করে না দেখতে পারলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

চোখের আর একটি নাম অক্ষিগোলক। গোলাকার এই চক্ষু একটি নির্দিষ্ট আয়তনের। খুব ছোট শিশু ছাড়া চক্ষুগোলকের আয়তন বড় হতে পারে না। এই অক্ষিগোলকের অনেক অংশই আমাদের দৃষ্টির প্রখরতার জন্য স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন। সেইজন্য চোখের কয়েকটি অংশ যেমন- কর্ণিয়া, লেন্স, ভিট্রিয়াস এ সরাসরি রক্ত সরবরাহ নেই। এইসব অংশে অক্সিজেন সরবরাহ এর জন্য রক্ত থেকে চোখে তৈরী হয় এক ধরনের তরল পদার্থ যার নাম অ্যাকুয়াস হিউমার।
এই অ্যাকুয়াস হিউমার চোখের একদিকে তৈরী হচ্ছে এবং অন্যদিক (চোখের কোন) দিয়ে বেরিয়ে আবার রক্তে মিশে যায়। এই তরল পদার্থ দিয়েই চোখের অভ্যন্তরীণ একটি চাপ তৈরী হয়- যার নাম চোখের প্রেসার বা (ওহঃৎধ ঙপঁষধৎ চৎবংংঁৎব, ওঙচ)
কোন কারণে অ্যাকুয়াস বেশি তৈরী হলে কিংবা চোখ থেকে বেরিয়ে যাবার পথে বাধার সৃষ্টি হলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যায়। চোখের এই চাপ বাড়লে চোখের অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করে এবং ‘গ্লকোমা’ রোগের উৎপত্তি হয়।

চোখের পিছনে কালো স্পট দেখা বেশ সাধারণ একটা চোখের উপসর্গ। যাদের মাইনাস পাওয়ার এর চশমা লাগে তারাই বেশি স্পট দেখতে পান। চোখের নড়াচড়ার সাথে সাথে এই স্পটগুলিও নড়াচড়া করে। সাধারণত: চোখের ভিট্রিয়াস জেলের মধ্যে তিলের মত বস্তু তৈরী হয় (degenerative change)। সারা জীবনেও এই স্পটগুলি চোখের ক্ষতি করে না বা দৃষ্টিরও পরিবর্তন হয় না। কয়েকটি চোখের রোগ যেমন- রেটিনার ডিটাচমেন্ট, রেটিনার পানি জমে যাওয়া, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, লেন্সের মধ্যভাগে ছানি পড়া ইত্যাদি নানা কারণেও চোখের সামনে কালো স্পট দেখা যায়। যেহেতু মারাত্মক চোখের রোগেও চোখের সামনে কালো স্পট দেখা যায়- সেজন্য এসকল উপসর্গ থাকলে অন্তত: একবার চক্ষু পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত।

গ্লকোমা যেহেতু চোখের একটি মারাত্মক রোগ, এবং নিরব অন্ধত্বের প্রধান কারণ সেজন্যে একজন আদর্শ গ্লকোমা রোগী
১। সঠিকভাবে নিজের চিকিৎসা করবেন। চিকিৎসক প্রদত্ত চোখের ওষুধ নিয়মিত ও সময়মত ব্যবহার করবেন।
২। নিয়মিত চোখের প্রেসার মাপার জন্য এবং ভিসুয়াল ফিল্ড বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য চক্ষু ও গ্লকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক চলবেন।
৩। গ্লকোমা সম্পর্কিত পুস্তক পাঠ করবেন এবং ইন্টারনেটে এ সম্পর্কে আধুনিক পরিবর্তন সম্বন্ধেও অবহিত হবেন।
৪। নিজে জ্ঞানার্জন করে- একজন গ্লকোমা রোগী শুধু নিজেই চিকিৎসা করবেন না- তিনি অন্যদেরকেও গ্লকোমা রোগ এবং এর জটিলতা সম্পর্কে অবহিত করবেন।

বিশেষ করে গ্লকোমা যেহেতু বংশগত রোগ- কারও এই রোগ হলে তার ছেলেমেয়ে, বাবা মা এবং রক্তসম্পর্কিত নিকটাত্মীয়দেরও গ্লকোমা আছে কিনা তা পরীক্ষা করাতে হবে।

হ্যাঁ- জন্মগত গ্লকোমা রোগের ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। তবে তা প্রায় সকল ক্ষেত্রেই শল্য চিকিৎসা। অন্যান্য গ্লকোমা রোগে যেমন চোখের ফোঁটা ওষুধ, লেজার এর সাহায্যে চিকিৎসা করা সম্ভব- জন্মগত গ্লকোমার ক্ষেত্রে তা প্রায় অকার্যকর। জন্মগত গ্লকোমা হলে শিশুর চোখ অনেক বড় হয়ে যায় কিছুটা গরুর চোখের মত দেখায়। এজন্যে ঐ ধরনের চোখকে বলা হয়- বুফথ্যালমস (ইঁঢ়যঃযধষসড়ং)। জন্মগত চোখের ত্র“টি হবার কারণে এই জন্মগত গ্লকোমা হয়ে থাকে। শিশুদের চোখ বড় হবার সাথে সাথে- চোখ দিয়ে পানি পড়ে চোখের চাপ বেড়ে কর্ণিয়া ঘোলা হয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে চোখ চিরতরে অন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে চোখের চাপ কমাবার ওষুধ ব্যবহার করে যত দ্রুত সম্ভব একজন গ্লকোমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শল্য চিকিৎসা করা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখের চাপ কমে যায় এবং শিশুর চোখ আস্তে আস্তে ভালো হয় ও দেখার উন্নতি হয়।

আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরার সময়ে অনেকের চোখে ময়লা পড়তে পারে।  এছাড়া দু®কৃতিকারী, ছিনতাইকারী চোখের মধ্যে ময়লা, মলম, মরিচের গুড়া ঘষে দেয়। অনেকের চোখে এসিড নিক্ষেপ করা হয়। চোখে যে কোন ধরনের ময়লা পড়লে তা একটি জরুরী বিষয়। সংগে সংগে ব্যবস্থা না নিলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। চোখের ময়লা পড়ার সংগে সংগে নিজে বা কাউকে দিয়ে দৃশ্যত কোন ময়লা ফেলে দিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। এরপর চোখে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ফোটা ওষুধ দিনে ৫/৬ বার দিতে হবে। যাদের চোখে এসিড বা চুন জাতীয় পদার্থ দিয়ে ক্ষত হয়- তা আরো মারাত্মক। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। চোখের ভেতরে কাচ বা শক্ত কোন বস্তুর আঘাতে অক্ষিগোলকের ক্ষতি হতে পারে, কেটে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ চোখের ভিতর ওষুধ দিয়ে চোখের পটি লাগিয়ে দিতে পারেন এবং কোন কোন সময়ে চোখের অপারেশন এরও প্রয়োজন হতে পারে।

সাধারণত: বয়স্কদেরই চোখে ছানি পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের নানা প্রকার অসুখে বা কোন ওষুধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শিশু চোখের ছানি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। যেহেতু ছানি হচ্ছে চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে যাওয়া, ছানি পড়লে শিশুর চোখে আলো প্রবেশ করতে পারে না। এতে শিশু চোখে দেখে না এবং তার রেটিনার বিকাশও ঘটে না। সুতরাং জন্মগত ছানি- যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করতে হবে। ছানির চিকিৎসা হচ্ছে- অপারেশন করে ঐ ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করতে হবে। বয়স ২ বছর না হলে কৃত্রিম লেন্স বসানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ- এজন্য এসব শিশুদেরকে অপারেশন এর পর চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স এর সাহায্যে দেখার ব্যবস্থা করা হয় এবং বড় হলে ৭/৮ বছর বয়সে চোখে ২য় বার অপারেশন করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্তত: প্রাথমিক অবস্থায় আপনার গ্লকোমা আছে কিনা আপনি বুঝতে পারবেন না। ‘গ্লকোমা’ রোগ অত্যন্ত অগ্রসর হয়ে গেলে চোখের দৃষ্টি ও দৃষ্টির পরিসীমা অনেক কমে যায়, আর তখন রোগীরা বুঝতে পারেন। এই জাতীয় গ্লকোমাকে বলা হয়- প্রাথমিক এঙ্গেল খোলা গ্লকোমা।
অন্য ধরনের গ্লকোমা- যেমন- প্রাথমিক এঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমা, জন্মগত গ্লকোমা ও সেকেন্ডারী গ্লকোমাতে অনেক উপসর্গ থাকে এবং রোগগুলি তুলনামূলক তাড়াতাড়ি রোগনির্ণয় সম্ভব হয়।
প্রাথমিক এঙ্গেল খোলা গ্লকোমাতে সাধারণত: কোন উপসর্গ থাকে না এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞরাই নির্ণয় করে থাকেন। চোখের প্রেসার যদি স্বাভাবিক ১০-২০ মিমি মারকারীর বেশি হয়, চোখের ভিতরে অপটিক নার্ভের অস্বাভাবিক পরিবর্তন থাকে এবং দৃষ্টির পরিসীমায় (ঠরংঁধষ ঋরবষফ) পরিবর্তন থাকে তাহলে আপনার গ্লকোমা হবার সম্ভাবনা আছে। এরপর আরও কয়েকটি বিশেষ পরীক্ষা যেমন চোখের কোন পরীক্ষা (এড়হরড়ংপড়ঢ়ু) কর্ণিয়ার পূরত্ব (ঈবহঃৎধষ পড়ৎহবধষ ঞযরপশহবংং) ও.সি.টি,এইচ,আর,টি, ইউ,বি.এম ইত্যাদি নানা ধরনের আধুনিক পরীক্ষার সাহায্যে আপনার গ্লকোমা এবং তার প্রকারভেদ নিশ্চিত করা হয়।

আমরা সামনের দিকে তাকালে শুধু সোজাসুজিই দেখি না- দুই পাশও দেখতে পাই। এই পার্শ্ব দেখাটার নাম দৃষ্টির পরিসীমা। দৃষ্টির পরিসীমা বা ভিসুয়াল ফিল্ড মাপার পদ্ধতির নাম ভিসুয়াল ফিল্ড এনালাইসিস এবং যন্ত্রের নাম ভিসুয়াল ফিল্ড এনালাইজার। চোখের উচ্চ চাপ গ্লকোমা রোগে- এই দৃষ্টির পরিসীমায় নানা প্রকার পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া চোখের নানা প্রকার রোগে ও সমস্যায় দৃষ্টির পরিসীমায় এটি ধরা পড়ে। ব্রেনের অপটিক স্নায়ুতে বা এর গতিপথে কোন চাপ পড়লে বা রোগ হলে তার দৃষ্টির পরিসীমায় এটি হতে পারে। এই পরীক্ষাটি পূর্বে ম্যানুয়াল বা হাতে করা হত বর্তমানে আরও গ্রহণযোগ্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে করা হয়। এ ধরনের যন্ত্রের নাম কম্পিউটারাইজড পেরিমিটার।

চোখে অনেক দূরারোগ্য ক্যানসার হতে পারে। এছাড়া শরীর এর অন্য কোন ক্যানসার ও রক্তের মাধ্যমে চোখে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চোখের বিভিন্ন অংশে যেমন- চোখের পাতায়, কনজাংকটিভায়, আইরিসে, করয়েড এবং রেটিনায় ক্যানসার হতে পারে। সবচেয়ে মারাত্মক হল ‘রেটিনোব্লাসটোমা’ যা চোখের রেটিনা থেকে উৎপত্তি হয়। প্রতি ১৭০০০ শিশুর মধ্যে ১ জন শিশুর এই ক্যানসার হতে পারে। শিশুর বয়স ৩ বছর পার হলে এই রোগের হার খুব কম। রেটিনোব্লাসটোমা বংশ পরম্পরায় ছড়াতে পারে। শিশুদের চোখের মণি সাদা দেখা গেলে, চোখ লাল হয়ে পানি পড়তে থাকলে, চোখে দেখতে পারছে না বুঝলে, চোখের পাতা ফুলে বন্ধ হয়ে গেলে- চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নেয়া উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। রেটিনোব্লাসটোমার ধাপ অনুযায়ী লেজার, কেমোথেরাপি ইত্যাদি দেয়া হয়। চোখে দেখার একেবারেই সম্ভাবনা না থাকলে এবং রোগটি ব্রেনে বা অন্য কোথাও ছড়িয়ে যাবার ভয় থাকলে- ঐ চোখটি তুলে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।

চোখের প্রদাহ আইরাইটিস- একটি মারাত্মক চোখের রোগ। অনেকে সাধারণ চোখ ওঠা মনে করে এই রোগের চিকিৎসা বিলম্ব করেন এবং অনেক জটিলতার সম্মুখীন হন। আইরাইটিস হলে- চোখ লাল হয়, ব্যাথা হয়, আলো ভীতি হয়, চোখে দেখার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই সকল উপসর্গ থাকলে জরুরীভাবে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। আইরাইটিস রোগ এর সঠিক চিকিৎসা না হলে চোখে ছানি পড়তে পারে, সেকেন্ডারী গ্লকোমা হতে পারে, রেটিনায় পানি জমতে পারে। মাসের পর মাস বা বছর ধরে এই রোগে ভুগলে- চোখের পানি বা অ্যাকুয়াস হিউমার তৈরী কমে গিয়ে চোখটি অত্যন্ত নরম (phthysical) হয়ে যেতে পারে এবং চোখে দেখাও একেবারে কমে যেতে পারে এমনকি অন্ধত্বও হতে পারে।

ম্যাকুলা’ হচ্ছে চোখের রেটিনার কেন্দ্রে অবস্থিত ৫.৫ মি.মি. আয়তনের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থান। আমাদের তীক্ষ্মদৃষ্টির জন্যে, এই ‘ম্যাকুলা’র সুস্থ্য থাকা দরকার। বয়স বাড়ার সাথে সম্পর্কিত এই ম্যাকুলার কোষে পরিবর্তন হয় বা ডিজেনারেশন হয়- যার নাম ‘ম্যাকুলার ডিজেনারেশান’ বা (অমব জবষধঃবফ গধপঁষধৎ উবমবহবৎধঃরড়হ, অজগউ)
সাধারণত: ৫০-৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মাঝে এই রোগ শুরু হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগের হারও বাড়তে থাকে। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ২ ধরনের হয়ে থাকে শুকনা ও ভেজা ধরনের (উৎু ্ ডবঃ ঃুঢ়ব – অজগউ)
রোগীদের দৃষ্টি আস্তে আস্তে কমতে থাকে। সাধারণত: ২ চোখই আক্রান্ত হয় তবে আগে- পিছে হতে পারে। দেখার মধ্যখানে কালো স্পট আসতে পারে- বস্তুগুলি- আঁকাবাঁকা বা ছোট, বড় দেখা যেতে পারে। লেখাপড়া করতে সমস্যা হয়। গাড়ীর আলো চোখে পড়লে- বা অন্য কোন শক্তিশালী আলো চোখে পড়লে- চোখ ঘোলা হয়ে যেতে পারে। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এর চিকিৎসার সফলতা কম। শুকনা ধরনের ক্ষেত্রে এখনও কোন চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না তবে ভেজা ধরনের ডিজেনারেশনে চোখের ভেতরে এক ধরনের লেজার এবং ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় বাংলাদেশে এর প্রচলন এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

শরীরের বিকাশের সাথে সাথে চোখের বিকাশ এবং সুৃস্বাস্র্থ্যের জন্য ভিটামিন খুবই প্রয়োজন। ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের যদি দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন এ খাবারের সাথে না খায়, ডায়রিয়াজণিত কারণে এই ভিটামিনের শোষণ ক্ষমতা লোপ পায় বা অন্য কোন কারণে ভিটামিন এ’র অভাব হলে- শিশুদের চোখের নানা সমস্যা দেখা দেয়।
১। রাতকানা – শিশুরা রাত্রে বা কম আলোতে চলার সময় ধাক্কা খায়, সঠিকভাবে চলতে বা দেখতে পায় না। রাত্রে দেখার জন্য ভিটামিন এ’র সাহায্যে রেটিনিন সাইকেল এর প্রয়োজন। সুতরাং এই ভিটামিনের অভাবে শিশুরা রাত্রে বা অন্ধকারে ভালো দেখতে পায় না।
২। ভিটামিন এ’র অভাব দীর্ঘদিন চলতে থাকলে চোখের কনজাংকটিভা শুকিয়ে যায় এবং বিটট স্পট দেখা যায়। আস্তে আস্তে কর্ণিয়াও শুকিয়ে যায় এবং কর্ণিয়ার ক্ষত হতে শুরু করে। ভালো চিকিৎসা না হলে কর্ণিয়া ছিদ্র হয়ে যায়, অনেক সময় কর্ণিয়া সম্পূর্ণ গলে চোখের আইরিশ বেরিয়ে আসে এবং রোগী সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়।

হ্যাঁ- লেজার রশ্মি ব্যবহার করে কয়েক ধরনের গ্লকোমার চিকিৎসা করা হয়। এঙ্গেল খোলা গ্লকোমার জন্য আর্গন লেজার ট্রাবিকুলোপ্লস্টি (অঈঞ), সিলেকটিভ লেজার ট্রাবিকুলোপ্লাস্টি (ঝখঞ) করা হলে অনেকের চোখের প্রেসার কমে যায়। এঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমার জন্য ইয়াগ লেজার পেরিফেরাল আইরোডোটমি (ণঅএ খধংবৎ চ.ও.) আরগন লেজার পেরিফেরাল আইরোডোপ্লাস্টি (অখচও) করা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসে রেটিনার রক্তক্ষরণ হলে বা রেটিনার রক্তনালী বন্ধ হয়ে অনেক সময় চোখের চাপ বাড়তে পারে- যার নাম নিওভাসকুলার গ্লকোমা। এই ধরনের গ্লকোমার চিকিৎসা হিসাবে- রেটিনার লেজার- আরগন লেজার ফটোকোগুলেশন (অখচ) করা হয়।

কম্পিউটার বা কম্পিউটারের মত এমন যন্ত্রপাতিতে নিয়মিত ও অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে চোখের নানা সমস্যা ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে- এই অবস্থাকে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে- আমেরিকার ১৪৩ মিলিয়ন লোক প্রতিদিন কম্পিউটারে কাজ করে থাকেন এবং তাঁদের ৮৮% লোকেরই সামান্য থেকে বেশি নানা মাত্রার চোখের উপসর্গ রয়েছে। সুতরাং কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম-সারা বিশ্বে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিগণিত।
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম-এর উপসর্গসমূহ ঃ
১) মাথা ব্যাথা, চোখে ব্যাথা
২) চোখ জ্বালাপোড়া করা
৩) চোখের ক্লান্তি রোধ করা
৪) ঝাপসা দেখা বা মাঝে মাঝে ২টি দেখা
৫) ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যাথা
কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম-এর কারণ ঃ
কম্পিউারের অক্ষরগুলো ছাপার অক্ষরের মত নয়। ছাপার অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ এবং পার্শ্বের ঘনত্ব একই রকম- এগুলো দেখার জন্য সহজেই চোখের ফোকাস করা যায়, অন্যদিকে কম্পিউটারের অক্ষরগুলোর মধ্যভাগ ভালো দেখা যায় কিন্তু পার্শ্বভাগের ঘনত্ব কম হওয়ায় পরিস্কার ফোকাসে আসে না। কম্পিউটারের অক্ষরগুলোর এই ফোকাসের অসমতার জন্য চোখের নিকটে দেখার যে প্রক্রিয়া বা একামোডেশন ঠিকমত কাজ করতেপারে না। এভাবে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
কম্পিউটারের চশমা ঃ
সাধারণ লেখাপড়ার সময় – ১৪-১র্৬র্  দূরে পড়ার জন্য যে পাওয়ারের চশমা লাগে কম্পিউটারে কাজ করার সময় ১৮-২র্৮র্  দূরে মনিটর রেখে সে পাওয়ার দিয়ে ভালো দেখা যায় না। চক্ষু বিশেষজ্ঞগণ কম্পিউটারে কাজ করার জন্য বিশেষ পাওয়ারের চশমা দিয়ে থাকেন- যার নাম- কম্পিউটার চশমা বা ঈড়সঢ়ঁঃবৎ ঊুব এষধংং। পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ঁহরভড়পধষ বা শুধুমাত্র একটি পাওয়ারের চশমা দিলেই চলে কিন্তু পঁয়ত্রিশোর্ধ ব্যক্তিদের জন্য কোন কোন সময় ঐ ইউনিফোকাল চশমা দিয়ে তুলনামূলক নিকটে কপি পড়তে অসুবিধা হতে পারে- তাদের জন্য মাল্টি ফোকাল চশমা দিলে কপি পড়া এবং কম্পিউটার মনিটরে কাজ করার সুবিধা হয়।
কম্পিউটারে ভিশন সিনড্রম থেকে মুক্তি পাবার ৯টি উপায় ঃ
১)    চক্ষু পরীক্ষা ঃ কম্পিউটার ব্যবহারের পূর্বে চক্ষু পরীক্ষা করে, চোখের কোন পাওয়ার থাকলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরী কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
২)    সঠিক আলোর ব্যবহার ঃ রুমের ভিতরে বা বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত আলো- চোখের ব্যাথার কারণ হতে পারে। বাইরে থেকে আলো এসে চোখে না লাগে বা কম্পিউটার স্ক্রীনে না পড়ে সে জন্যে পর্দা, ব্লাইন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের আলো- টিউব লাইট বা ফ্লোরেসেন্ট বাল্বের আলো হলে এবং স্বাভাবিক অফিসের আলোর চাইতে কিছুটা কম হলে চোখের জন্য আরামদায়ক।
৩)    গ্লেয়ার কমানো ঃ কম্পিউটার মনিটরের অ্যান্টি গ্লেয়ার স্ক্রীন ব্যবহার করে এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ প্লাস্টিক এর কাঁচ ব্যবহার করলে গ্লেয়ার কমানো যায়।
৪)    কম্পিউটার মনিটরের ‘ব্রাইটনেস’ বাড়ানো বা কমানো ঃ ঘরের আলোর সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে কম্পিউটার মনিটরের আলো কমানো বা বাড়ানো যাতে- মনিটরে লেখা গুলি দেখতে আরামদায়ক হয়।
৫)    ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন ঃ কম্পিউটারে কাজ করার সময় চোখের পলক পড়া কমে যায়। এর ফলে চোখের পানি কমে যায় ও চক্ষু শুষ্কতা বা ড্রাই আই হতে পারে। এ অবস্থায় চোখ শুষ্ক মনে হবে। কাটা কাটা লাগবে। চোখের অস্বস্তি ও ক্লান্তি আসবে। কম্পিউটার কাজের সময়- ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন। এরপরও সমস্যা থাকলে চিকি॥কের পরামর্শ নিয়ে চোখের কৃত্রিম পানি (Artificial Tears) ব্যবহার করুন।
৬)    চোখের ব্যায়াম ঃ ৩০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার র অন্যদিকে দূরে তাকান। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে কোথঅও দেখুন এবং আবার নিকটে অন্য কিছু দেখুন। এভাবে চোখের বিভিন্ন ফোকাসিং মাংশপেশির ব্যায়াম হবে। এভাবে কয়েকবার করে আবার কিছুক্ষণ কাজ করুন।
৭)    মাঝে মধ্যে কাজের বিরতি দিন ঃ কাজের মাঝে মধ্যে কয়েক মিনিটের জন্য বিরতি দিন। এক ঘন্টা কম্পিউটারে কাজ করে ৫-১০ মিনিটের বিরতি দিয়ে অন্য কোন দিকে দেখুন, বা অন্য কোন কাজে সময় কাটিয়ে আবার কম্পিউটারের কাজ শুরু করতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে ২ ঘন্টা একটানা কম্পিউটারে কাজ করে ১০-২০ মিনিটের বিরতি দিলেও একই রকম ফল পাওয়া যায়।
৮)    কাজের জায়গার কিছু পরিবর্তন ঃ কম্পিউটারে কাজ করার চেয়ারটি হাইড্রলিক হলে ভালো হয়, যাতে কাজের সময় চোখের উচ্চতা কম্পিউটার মনিটরের চাইতে সামান্য উঁচুতে থাকে। মনিটর চোখের বরাবর থাকতে হবে। মনিটর বাকা থাকলে অক্ষরগুলির পরিবর্তন (distortion) হতে পারে যা চোখের ব্যাথার কারণ হতে পারে। অনেক সময় টাইপ করার কপিটি এখানে সেখানে রেখে বারবার মনিটর থেকে অনেকখানি দূরে কপি দেখতে হয়। এতেও মাথা ব্যাথা ও চোখে ব্যাথা হতে পারে। মনিটরের পাশেই পরিমিত আলো ফেলে কপি স্ট্যান্ডে এই লেখাগুলি রাখা যেতে পারে। তাতে বারবার চোখের একোমোডেশন এর পরিবর্তন কম হবে ও কাজ আরামদায়ক হবে।
৯)    কাজের ফাকে ফাকে ব্যায়াম ঃ কম্পিউটারে কাজের সময় শুধু চোখের বা মাথার ব্যথা হয় না- অনেকেরই ঘাড়ের ব্যথা, কাধে ব্যথা, কোমরে ব্যথা এসব উপসর্গ হতে পারে। কাজের ফাকে ফাকে যদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত পা ও কাঁধের নাড়াচাড়া করা হয় বা ব্যায়াম করা হয় তাহলে উপরের উপসর্গসমূহ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

হ্যাঁ- একজন অভিজ্ঞ ফ্যাকো সার্জন এর হাতে ফ্যাকো সার্জারী একটি নিরাপদ সার্জারী। তবে যেহেতু এটি শল্য চিকিৎসা- তাই যেকোন শল্য চিকিৎসার মত এই সার্জারীতে কিছু জটিলতা হতে পারে। ছানি বেশি পেকে গেলে বা চোখের লেন্স যদি বেশি শক্ত হয়ে যায়, চোখের মণি বা পিউপিল যদি প্রয়োজনের তুলনায় বড় না হয়, এক ধরনের ছানি যেমন- পিপিসি, লেন্সের জনিউল বা আটকে থাকা সুতার দুর্বলতা থাকে তাহলে ফ্যাকো সার্জারীতে জটিলতা হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অন্য যে কোন অপারেশন এর মতো ফ্যাকো সার্জারীতেও ইনফেকশন বা প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত: সার্জনগণ এসকল বিষয়ে অপারেশন এর পূর্বেই মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।

যাদের চোখের পাওয়ার আছে- কিন্তু চশমা বা কনটাক্স লেন্স পরতে চান না- তাদের জন্য আধুনিক একটি চিকিৎসা ব্যবস্থার নাম- ল্যাসিক সার্জারী। ল্যাসিক ইংরেজী Laser Assisted In-Situ Keratomileusis এর সংক্ষিপ্ত নাম খঅঝওঈ. এক্সাইমার (Excimier) লেজার রশ্মির সাহায্যে চোখের কর্ণিয়ার আকৃতির বা গঠনের পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ চোখের পাওয়ারের পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক পদ্ধতির অপারেশন এর প্রকারভেদের মাধ্যমে মাইনাস বা প্লাস পাওয়ারকে পরিবর্তন করে বিনা পাওয়ার বা জিরো পাওয়ার করা হয়।
কাদের চোখে ল্যাসিক করা যায়?
১) নিকট দৃষ্টি বা মায়োপিয়া (-২.০০ থেকে – ২০.০০ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
২) দূরদৃষ্টি বা হাইপারমেট্রপিয়া (+২.০০ থেকে +৮.০০ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
৩) অ্যাসটিগম্যাটিজম (১.০০ ডায়াপ্টার থেকে ৭ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
৪) সাধারণত: ১৮ থেকে ২১ বচর বয়সের পরে।
ল্যাসিক অপারেশন
ষ    চোখের ড্রপ বা ফোঁটা ওষুধ দিয়ে কর্ণিয়াকে অবশ করা হয় এবং এক্সাইমার লেজার রশ্মির সাহায্যে এর আকৃতির পরিবর্তন করা হয়।
ষ    রোগী লেজার দেয়ার সময় অবশ করা হয় বলে কোন ব্যাথা পান না।
ষ    এই অপারেশন একটি মাইক্রোসার্জারী। সুতরাং রোগীকে টেবিলে শোয়ানো হয় এবং চোখের উপরে অপারেশন মাইক্রোসকোপ এনে- ফোকাস করা হয়।
ষ    মাইক্রোকেরাটোম এর সাহায্যে, খুব পাতলা- কর্ণিয়ার একটি লেয়ার তৈরী করে তা উল্টিয়ে রাখা হয় এবং চোখের কর্ণিয়ার উপরে ১৫-৬০ সেকেন্ড লেজার দেয়া হয়। কতটুকু লেজার প্রয়োজন হবে তা ঐ চোখের পাওয়ার পরিবর্তন এর উপর নির্ভর করে- কম্পিউপারের সাহায্যে হিসাব করেই দেয়া হয়। এরপর কর্ণিয়ার ঐ পাতলা লেয়ারটি পূর্বের স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ষ    লেজার দেবার পর- রোগী ১৫.৩০ মিনিট হাসপাতালে অবস্থান করে বাড়ী চলে যেতে পারেন।
ল্যাসিক এর জটিলতা
ল্যাসিক সার্জারী- যথেষ্ট নিরাপদ একটি ব্যবস্থা। এই অপারেশন এর ফলাফল শতকরা ৯৯ ভাগই সফল। যেহেতু এটি একটি অপারেশন, সেজন্যে কার কারও ক্ষেত্রে সামান্য অপারেশন জটিলতা হতে পারে। অভিজ্ঞ ল্যাসিক সার্জন এর হাতে এ জটিলতাও খুব কম। অনেক রোগী- অপারেশন এর সময় ও পরে ২/৩ ঘন্টা চোখের সামান্য ব্যথা ও চাপ অনুভব করেন। সাধারণত: ১ দিন পরই এ সকল উপসর্গ ভালো হয়ে যায়।
চোখে অন্ধত্ব হয়ে যাবার মত জটিলতা এই সার্জারীতে হয় না বললেই চলে।
ল্যাসিক এর কতদিন পর সম্পূর্ণ ভালো দেখা যায়?
ল্যাসিক এর পরপরই রোগী বেশ ভাল দেখতে থাকেন। তবে সম্পূর্ণ ভালো হতে অনেকের প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে।
অপারেশন-এর পর ল্যাসিক বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকবার রোগীকে পুনঃ পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে ওষুধ এবং সামান্য পাওয়ারের চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স দিতে পারেন।
কাদের চোখে ল্যাসিক করা উচিত নয়
ষ    সাধারণত: ১৮ বচর বয়সের পূর্বে। কারণ এই বয়সের পূর্বে চোখের পাওয়ার এর দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
ষ    যাদের চোখের পাওয়ার প্রতি বছরই অতিমাত্রায় পরিবর্তন হচ্ছে বা স্থিতিশীল হচ্ছে না।
ষ    গর্ভবতী মহিলা (লেজার রশ্মি দ্বারা ভ্রƒণের ক্ষতি এড়ানোর জন্য)
ষ    চোখের কোন অসুখ যেমন গ্লকোমা, ছানি, ভাইরাসজনিত চোখের রোগ থাকলে- ল্যাসিক করা উচিত নয়।
ষ    শারীরিক কিছু রোগ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, এস.এল.ই ইত্যাদি থাকলে ল্যাসিক করা উচিত নয়।

অনেকেই মনে করেন- চোখ তুলে ফেলে অন্য কারো ভালো চোখ লাগালে আবার দেখা যেতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চোখ তুলে ফেলে দিলে- কখনও আর ঐ চোখে দেখার সুযোগ নেই। চক্ষু দান বলতে আমরা বুঝি- কর্ণিয়া দান। চোখের সামনে যে স্বাস্থ নেত্র স্বচ্ছ বা কর্ণিয়া থাকে- তা অনেক কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন মৃত কোন ব্যক্তির কর্ণিয়া এনে ঐ চোখে সংযোজন করা যায়। এই পদ্ধতির নাম-কেরাটোপ্লাস্টি। গৃহিত ব্যক্তির যদি চোখের ভেতরে রেটিনা, লেন্স ও অন্যান্য অংশ ভালো থাকে তাহলেই কর্ণিয়া সংযোজন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। চোখ তুলে ফেলার মাসখানেক পর ঐ চোখের কোটরে কৃত্রিম পাথরের চোখ লাগানো যেতে পারে- তাতে সৌন্দর্য বর্ধক হবে কিন্তু চোখে দেখার কোন সম্ভাবনাই নেই।

চোখের দৃষ্টি বলতে আমরা বুঝি চোখের শক্তি বা পাওয়ার যা দ্বারা আমরা বিভিন্ন বস্তুকে আলাদা আলাদাভাবে চিনতে পারি বা বুঝতে পারি। চোখের দৃষ্টি মাপার জন্য সাধারণত: স্নেলেন্স চার্ট ব্যবহার করা হয়। এই চার্টে ইংরেজি, বাংলা, অন্য ভাষা ছাড়াও বিভিন্ন চিহ্ন থাকে। সাধারণত: ৭টি লাইনে এই চিহ্নগুলি একটি নিয়মের মধ্যে বড় থেকে ছোট আকারে সাজানো থাকে এবং লাইনগুলির নিচে ৬০, ৩৬, ২৪, ১৮, ১২, ৯, ৬- এভাবে লেখা থাকে। চার্টটি রোগী থেকে ২০ ফুট বা ৬ মিটার দূরে রাখা থাকে। কোন ব্যক্তি ৬ মিটার দূর থেকে সবচেয়ে নিচের ও ছোট অক্ষরের লাইনটি দেখতে পারলে বা পড়তে পারলে তার দৃষ্টি শক্তিকে বলা হবে ৬/৬। কেউ যদি শেষ লাইন দেখতে না পারেন কিন্তু নিচ থেকে ২য় লাইন দেখতে পারেন তাহলে তার দৃষ্টিশক্তি হবে ৬/৯, এভাবে শুধুমাত্র সবচেয়ে উপরের লাইন বা অক্ষর দেখতে পারলে তার দৃষ্টিশক্তি হবে ৬/৬০।

সাধারণ চোখ ওঠা বলতে ঋতুনির্ভর ভাইরাস জণিত চোখ ওঠাকেই বোঝায়। এই জাতীয় চোখ ওঠা নিজে নিজে ৭/৮ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। চোখের অস্বস্তি, কাটা কাটা লাগা, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। তবে চোখে দেখার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয় না। এ রকম চোখ ওঠা হলে- একটি এন্টিবায়োটিক ফোটা ওষুধ দিনে ৬/৭ বার চোখে দিলে চোখের আরাম অনুভূত হবে। সাধারণ ‘চোখ ওঠা’ থেকে অনেকের কর্ণিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর আলো ভীতি বেশি হবে, বেশি বেশি চোখ দিয়ে পানি পড়বে এবং দেখা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যাবে। এ সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

চোখের সমস্যার জন্য মাথা ব্যথা হতে পারে তবে অনেকে ধারনা করেন মাথা ব্যথার মূল কারণ চোখের সমস্যা- সেটা ঠিক নয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মাথা ব্যথার ৩টি প্রধান কারণ- ১. টেনশন থেকে মাথা ব্যথা ২. মাইগ্রেন থেকে মাথা ব্যথা ৩. চোখ, কান ও দাঁতের সমস্যায় মাথা ব্যথা ৪. উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন টিউমার বা শারীরিক অন্যান্য কারণে মাথা ব্যথা। দৈনন্দিন বিভিন্ন কারণে টেনশন থেকে মাথা ব্যথা হলেও চোখে এবং চোখের পাশে, ঘাড়ে, মাথার পেছনে ব্যথা হতে পারে। টেনশন কমে গেলে এবং সাধারণ ব্যথার ওষুধ খেলে এ ধরনের মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
মাইগ্রেন থেকে মাথা ব্যথা ঃ সাধারণত উত্তেজক কোন কারণ যেমন- হৈ চৈ, সোরগোল, হাট-বাজারে গেলে, উজ্জ্বল কোন আলোতে গেলে, মহিলাদের মাসিক এর সময়, কোন কোন খাবার খেলে ইত্যাদি নানা কারণে মাইগ্রেনের উপসর্গ বেড়ে মাথা ব্যথা হতে পারে। সাধারণত মাথার একদিকে ব্যথা করে এবং বমি হয় কিংবা বমি বমি লাগে। নীরব স্থানে এবং অন্ধকারে রোগী আরাম বোধ করেন।
চোখের কারণে মাথা ব্যথার প্রধান কারণ-
– দীর্ঘক্ষণ যাবৎ চোখের কাজ যেমন পড়াশুনা করা, টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করা। যাদের চোখের পাওয়ার আছে অথচ চশমা পরছেন না তাদের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথার হার অনেক বেশি। এসব কাজের ফাকে ফাকে চোখের বিশ্রাম দেয়া গেলে এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে এ ধরনের মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়। শিশুরা অনেক সময় সামান্য পাওয়ার বিশেষ করে সিলিন্ডার পাওয়ার থাকলে চোখ ছোট করে তাকিয়ে ভালো দেখতে পায়। এতে চোখের অ্যাকোমোডেশন বা সামঞ্জস্যকরণ বেশি করতে হয়, চোখের মাংশপেশি ও স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে তাতে মাথা ব্যথা হতে পারে। এ সকল শিশুকে প্রয়োজনীয় চশমা দেয়া হলে মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

অনেকে ছোটবেলা থেকে কোনদিন চশমা না লাগলেও ৪০ বছর বয়সের সময় পড়াশুনা করার জন্য চশমার প্রয়োজন হয়। এই অবস্থার নাম- চালশে বা ডাক্তারী ভাষায় প্রেসবায়োপিয়া। ছোট বেলায়- আমাদের চোখের লেন্স অনেক নমনীয় এবং নরম থাকে। চোখের সামঞ্জস্যকরণ বা অ্যাকোমোডেশন পদ্ধতির মাধ্যমে লেন্সের পাওয়ার বাড়ানো বা কমানো সম্ভব হয়। দূরে দেখার জন্য চোখের যতোটা পাওয়ার (ডায়াপ্টার) দরকার নিকটে পড়ার জন্য তার থেকে কয়েক ডায়াপ্টার বেশি দরকার। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলে লেন্স শক্ত হতে থাকে, নমনীয়তা কমে যায়, অ্যাকোমোডেশন ক্ষমতাও কমে যায়। এজন্যে প্লাস পাওয়ার চশমা ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার বাড়ানো হয় এবং পড়াশুনা করা ও নিকটের সকল কাজ করা যায়। এভাবেই যত বয়স বাড়বে ততই লেন্সের নমনীয়তা কমে। শক্ত হতে থাকে এবং এত বেশি প্লাস পাওয়ার এর চশমা পরার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

চোখের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা ‘লাল চোখ’। চোখের এলার্জি, ক্ষত, প্রদাহ, গ্লকোমা ইত্যাদি নানা কারণে চোখ লাল হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল চোখ মারাত্মক সমস্যা নয়। সাধারণ চোখ ওঠা, চোখের এলার্জিতে চোখ লাল হয়। চোখের অস্বস্তি ও চুলকানো প্রধান সমস্যা। কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য আলোভিতি হতে পারে। চোখে দেখার তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ফোঁটা দিনে ৫/৬ বার ব্যবহার করলে সাধারণ চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। চোখের এলার্জির জন্য প্রকারভেদে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় খাবার ওষুধ ও ফোটা ওষুধ এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কর্ণিয়ায় ক্ষত, আইরাইটিস, ইউভিয়াইটিস, গ্লকোমা ইত্যাদি মারাত্মক রোগ সমূহেও লাল চোখ হতে পারে। এই সকল সমস্যায় চোখের দেখা কমে যায়, চোখে ব্যথা হয়, আলোভিতি হয় এবং রোগী বুঝতে পারেন চোখের সমস্যা অনেক গুরুতর। এরকম অবস্থা মনে হলে সত্বর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

চক্ষুদান বলতে চোখের কর্ণিয়া দান এবং কর্ণিয়া সংযোজনকে বোঝানো হয়ে থাকে। যদিও চক্ষুদানের জন্য মৃত ব্যক্তির সম্পূর্ণ চোখটিকেই তুলে নেয়া হয় এবং চোখের সামনে স্বচ্ছ অংশ বা কর্ণিয়াকে আলাদা করে- জীবিত ব্যক্তির অস্বচ্ছ কর্ণিয়া বাদ দিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয় বা সংযোজন করা হয়। মৃত্যুর সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত ব্যক্তির চোখটি স্বযতেœ তোলা হয় কিন্তু ব্যর্থ চোখ তুলে বেশিক্ষণ সংরক্ষণ করা যায় না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই চোখ থেকে কর্ণিয়া আলাদা করে জীবিত ব্যক্তির চোখে সংযোজন করা হয়। তবে অনেক মূল্যবান মিডিয়াতে কর্ণিয়া অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায় এবং দেশে বিদেশে পাঠানো যায়। খুব ছোট শিশুদের এবং ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের কর্ণিয়া চক্ষুদানের জন্য উপযোগী নয়। এছাড়া যাদের এইডস, হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ক্যান্সার রোগ আছে তাদের চোখও চক্ষু দানের জন্য উপযোগী নয়।

গ্লকোমা প্রতিরোধের প্রধান শর্ত হলো এ বিষয়ে ব্যাপক জন-সচেতনতা সৃষ্টি এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ সহ সকল সাধারণ চিকিৎসকের এ রোগ নির্ণয়ে অংশগ্রহণ। আর এ দুটো বিষয়কে সুষ্ঠুভাবে কার্যকরি করার জন্য সমাজের শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তিবর্গ এবং চিকিৎসক সমাজকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাপক জন-সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সকল প্রচার মাধ্যমে (সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন) সাধারণ মানুষের জন্য সহজ সাবলীল ভাষায় এবং অবশ্যই মাতৃভাষায় এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রচার করতে হবে এবং এ কাজে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রামে-গঞ্জে চক্ষু শিবির করে যখন চোখের পানি অপারেশন করেন তখন সম্ভাব্য রোগীদের (পঁয়ত্রিশোর্ধ নারী পুরুষ) গ্লকোমা স্ক্রিনিং টেস্ট করা যেতে পারে। এতে সহজে সরাসরি রোগনির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক জনগণের মধ্যে এ রোগটি সম্পর্কে একটা সচেতনতাও সৃষ্টি হবে।  সাধারণ চিকিৎসকদের (জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স) জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা যায়। ফলে এ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন আধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি সম্বন্ধে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে এ রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকগোষ্ঠীর ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। যেহেতু আমাদের দেশে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম তাই সাধারণ চিকিৎসকদের এ বিষয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। গ্লকোমা রোগীও এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি তার রোগ ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তার আশেপাশের লোকজনকে জানালে তারা সহজেই রোগটি সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা করিয়ে চোখকে অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন। এছাড়া পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের পর বছরে একবার চোখের চাপ নির্ণয়সহ সম্পূর্ণ চক্ষু পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। এটা সবাই উপলব্ধি করলে গ্লকোমা রোগটি প্রতিরোধ সহজতর হবে।

হ্যাঁ- চোখের প্রেসার স্বাভাবিক ১০-২০ মি.মি. মারকারী থেকেও এক ধরনের গ্লকোমা হতে পারে। যাকে বলা হয় লো টেনশন গ্লকোমা বা নরমাল টেনশন গ্লকোমা। প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমার মতো এটি এক ধরনের গ্লকোমা যেখানে অপটিক নার্ভ ও দৃষ্টির পরিসীমায় প্রমাণিত পরিবর্তন দেখা যায় কিন্তু চোখের চাপ স্বাভাবিক অর্থাৎ ২১ মিঃ মিঃ মারকারির কম থাকে। এজন্য এ ধরনের গ্লকোমাকে নরমাল টেনশন গ্লকোমাও বলা হয়ে থাকে। চোখের চাপ কম থাকলেও কেন গ্লকোমা হয় এ নিয়ে অনেক মতভেদ ও তত্ত্ব (Theory) আছে। অনেকের মতে, কিছু মানুষের স্বাভাবিক মাত্রার চোখের চাপও ঐ বিশেষ চোখটির জন্য বেশি এবং অপটিক নার্ভের পরিবর্তন করতে সক্ষম। অনেকে মনে করেন, ঐ রোগীর জীবনে জন্মের সময় বা পরে কোন এক সময়ে রক্তের চাপ অত্যন্ত কমে যাওয়ায় চোখের ভেতরে ও অপটিক নার্ভে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করেছিল। ফলে তার চোখের কাপ-ডিস্ক অনুপাত বেড়ে যায় এবং দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। পরবর্তীকালে রক্তের চাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবার ফলে বিনা ওষুধেই চোখের চাপ স্বাভাবিক বা কম থাকে। অন্য এক তত্ত্ব অনুযায়ী রোগীর চোখের চাপ যখন মাপা হয় তখন হয়তো স্বাভাবিক থাকে কিন্তু দিনে বা রাতে কোন এক সময়ে চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় এবং অপটিক নার্ভের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে লো টেনশন গ্লকোমা রোগীদের প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর অন্তর মোট ২৪ ঘন্টা চোখের চাপ মাপা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার নাম ফেজিং (Phasing)। এই পরীক্ষায় যদি দেখা যায়, কোন বিশেষ সময়ে রোগীর চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তাহলে এতে রোগনির্ণয়সহ চিকিৎসারও সুবিধে হয়। দিন-রাতের ঠিক যে সময়টিতে ঐ চাপ বেড়ে যায় তার এক ঘন্টা আগে চোখের চাপ কমাবার ড্রপ দিলে চাপ স্বাভাবিক থাকবে এবং চোখের পুনরায় ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। রোগনির্ণয় হয়ে গেলে প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমার অনুরূপ অপারেশন করেও এই রোগটির চিকিৎা করা যেতে পারে। এ রোগে সাধারণত: চোখের চাপ ১২ মি:মি: মারকারি বা তার চেয়ে কম রাখার চেষ্টা করা হয়।

যারা প্রচুর মদ্যপান করেন, প্রচুর ধুমপান করেন বিশেষ করে যারা সিগার ও পাইপ টানেন- তাদের অনেকের চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়- এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারেন। আমাদের দেশে ‘রেকটিফাইড স্পিরিট’ খেয়ে অনেকেই চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন। যারা খাবার প্রতি উদাসীন, শরীরে প্রয়োজনীয় আমিষ ও পুষ্টির অভাব, তারা যখন অনেক মদ্যপান করেন তখন তাদের চোখে না দেখার উপসর্গ শুরু হয়।  প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর বমি ভাব হয়, মাথা ব্যথা হতে পারে, চোখে ঝাপসা দেখেন, রং বুঝতে অসুবিধা হয়, ভিস্যুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা করতে ‘সেন্ট্রোসিফাল স্কোটমা’ নামক ত্র“টি ধরা পড়ে। এ সময় মদ, সিগারেট ইত্যাদি খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে ‘হাইড্রোক্সিকোবালামিন’ নামক ভিটামিন ইনজেকশন প্রদান করা হলে অনেক রোগীর দৃষ্টিশক্তি অবনতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত চোখের অপটিক নার্ভ একবার শুকিয়ে গেলে- আর কোন চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায় না এবং রোগী অন্ধ হয়ে যান।

অনেক ওষুধেই চোখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু বিশেষ কয়েকটি ওষুধে দৃষ্টিশক্তির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ঃ ফোটা হিসাবে চোখে প্রচুর ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। চোখের এলার্জি, চোখের প্রদাহ এসব ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ফোটা ওষুধ অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে চোখের ইনফেকশন বাড়তে পারে, চোখের চাপ বেড়ে গ্লকোমা হতে পারে। এ জাতীয় ওষুধ খাবার বড়ি বা ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করলে রোগীর ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং চোখে ছানি ও গ্লকোমা হতে পারে।  যক্ষ্মা রোগে ব্যবহৃত ওষুধ- ইথামবুটাল ব্যবহার করলে অনেকের চোখের অপটিক নার্ভ শুকিয়ে যেতে পারে। হার্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যামিডারোন ব্যবহার করলে কর্ণিয়ার উপর দাগ পড়ে যায় এবং অপটিক নার্ভ শুকিয়ে যায়। খিচুনি রোগের ওষুধ ভিগাবাট্রিন ওষুধে চোখের রং দেখার পরিবর্তন হয় এবং দৃষ্টির পরিসীমায় ত্র“টি হয়। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক কুইনিন অনেকের চোখে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে ও অপটিক নার্ভ শুকিয়ে যেতে পারে। মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য এসব ওষুধ লেখার পর চিকিৎসকগণ মাঝে মাঝেই রোগীর ফলোআপ করে থাকেন, দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা, ভিসুয়াল ফিল্ড এনালাইসিস ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। চোখের কোন সমস্যা ধরা পড়লে ঐ ওষুধ বন্ধ করে অন্য কোন ওষুধ দিতে হবে।

অনেক মানুষের চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি থাকতে পারে কিন্তু এদের পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় অপটিক ডিস্কের কাপ-ডিস্ক অনুপাত স্বাভাবিক এবং দৃষ্টির পরিসীমাও স্বাভাবিক তাহলে তাদেরকে বলা হয় অকুলার হাইপারটেনশন। এসব রোগীর কেউ কেউ ভবিষ্যতে অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমা রোগীতে রূপান্তরিত হতে পারে বিধায় এদেরকে ‘গ্লকোমা সাসপেক্ট’ (Glaucoma Suspect) বলা হয়। এসব রোগীকে ওয়াটার ড্রিংকিং টেস্ট (Water Drinking Test) করে যদি পজিটিভ পাওয়া না যায় তাহলে অন্তত বছরে একবার পরীক্ষা করলেই চলে। কোন ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐ একটু বেশি চোখের চাপ হয়তো ঐ চোখের জন্য স্বাভাবিক এবং তা অপটিক নার্ভের জন্য ক্ষতিকর নয়। চিকিৎসা অকুলার হাইপারটেনশনের রোগীদেরকে সাধারণত কোন চিকিৎসা দেবার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি ফলোআপ পরীক্ষাতে অপটিক নার্ভ বা দৃষ্টির পরিসীমার কোন পরিবর্তন হতে থাকে তাহলে প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমার ন্যায় চিকিৎসা করাতে হবে।

চক্ষুদান বা কর্ণিয়া সংযোজনের পর গ্রহিতা রোগী চোখে ভালো দেখবেন কিনা তা অনেক কারণের উপর নির্ভর করে। দাতা ব্যক্তির বয়স, তার শারীরিক বিশেষ কোন রোগ যেমন এইডস, সিফিলিস, চোখের রোগ যেমন কর্ণিয়ার ক্ষত, গ্লকোমা, চোখের ক্যানসার ইত্যাদি থাকলে এবং ঐ কর্ণিয়া সংযোজন করলে ভালো দেখার সম্ভাবনা কম। গ্রহিতা রোগীর চোখেও কর্ণিয়ার অংশ ছাড়া অন্যান্য অংশ সুস্থ ও ভালো থাকতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোন জটিল রোগের কারণে চোখের জটিলতা থাকলে কর্ণিয়া সংযোজনের পরও ভালো দেখা যাবে না। একমাত্র সুস্থ্য চক্ষুদাতার কর্ণিয়া, একটি সুস্থ চোখে অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা সংযোজন করলে চক্ষুদান করার পর ভালো দেখা সম্ভব।

চোখের ছানি ও গ্লকোমা উভয় রোগেই চোখের দৃষ্টি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যার ফলে গ্লকোমার কারণে দৃষ্টি কমতে থাকলেও অনেকে চোখের ছানি ভেবে ভুল করে থাকেন। ছানি অনেকের কাছেই পরিচিত একটি চোখের অসুখ। এটা পাকতে সময় লাগে এবং এর অপারেশন করে চিকিৎসা করা হয়। অনেকে এক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে গ্লকোমাকে ছানি মনে করে তা পাকার জন্য অপেক্ষা করে এবং যখন রোগী প্রায় অন্ধ হয়ে যান তখন ছানি পেকে গেছে ভেবে চিকি॥কের পরামর্শের জন্য আসেন। এই অবস্থায় সত্যি যদি ছানি রোগ হয় তাহলে তার সঠিক চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু রোগী যদি গ্লকোমাতে ভুগে অন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার আর চিকিৎসা নেই। অচ এই রোগী যদি প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসতেন তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার পর চিকিৎসা করা যেত ও অন্ধত্ব এড়ানো সম্ভব হতো।

অল্প আলোতে অনেকক্ষণ ধরে পড়াশুনা, সেলাই করলে বা টেলিভিশন দেখলে ঐ একইভাবে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে অ্যাঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমার সূত্রপাত হতে পারে। আগেই বলেছি যাদের চোখে স্বল্প গভীর সামনের চেম্বার তাদেরই এরকমটি হতে পারে। সব মানুষের এই অসুবিধা হয় না। সুতরাং একমাত্র যারা অন্ধকার বা অল্প আলোতে কাজ করার সময় চোখে বা মাথায় ব্যথা অনুভব করেন তারা চক্ষু চিকিৎসককে দেখিয়ে গ্লকোমা আছে কি নেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।

রাতে কিংবা কম আলোতে দেখার জন্য আমাদের চোখের রেটিনার রড নামক এক ধরনের কোষ আছে। যাদের চোখে এই কোষগুলি তৈরী হয়নি, তৈরী হতে পারছে না বা তৈরী হবার পর কোন কারণে নষ্ট হয়েছে তারাই রাতে বা কম আলোতে ভালো দেখতে পারেন না।
আমাদের দেশে শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ’র অভাবে রাতকানা হওয়ার হার অনেক বেশি। চোখের রড কোষের তৈরী ও কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজনীয়।
বয়স ১২-১৫ বছর হলে অনেকে রাতে কম দেখা শুরু করেন। রেটিনার পিগমেন্ট কোষের ডিজেনারেশন হওয়া শুরু হলে এই রোগের উৎপত্তি হয়। এ রোগের নাম-রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগ এর কারণে রাতে কম দেখার প্রবণতা বাড়তে থাকে এবং একসময় দিনেও কম দেখতে শুরু করেন। এই রোগে দ্রুত চোখে ছানি পড়তে পারে এবং গ্লকোমায় আক্রান্ত হতে পারে। এখনও পর্যন্ত ‘রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা’ রোগের চিকিৎসা সন্তোষজনক নয়। চোখের আরও কিছু সমস্যা যেমন অনেক পাওয়ার এর নিকটদৃষ্টি, রেটিনার প্রদাহ- কোরিওরেটিনাইটিস, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, অতি অগ্রসর গ্লকোমা রোগ ইত্যাদি নানা কারণে কম আলোতে বা রাত্রে কম দেখা যেতে পারে।

সাধারণ মাত্রায় পানি, চা বা কফি খেলে গ্লকোমা হয় না। কিন্তু যদি কারও বংশগত গ্লকোমার প্রবণতা থেকে থাকে তাহলে অতি মাত্রায় পানি, চা বা কফি সেবন তার জন্য ক্ষতিকর। কয়েক মিনিটের মধ্যে ১ লিটার পানি পান করলে চোখের চাপ বেড়ে যেতে পারে। যাদের চোখে গ্লকোমা হবার সম্ভাবনা নেই তাদের ২ থেকে ৭ মিঃ মিঃ মারকারি পর্যন্ত এই চাপ বাড়ে। কিন্তু যাদের গ্লকোমা হবার সম্ভাবনা আছে (Glaucoma suspect) তাদের ক্ষেত্রে এই চাপ ৮/১০ মিঃ মিঃ মারকারি বা এরও বেশি বেড়ে যেতে পারে ও অপটিক নার্ভের ক্ষতি করতে পারে।এভাবে এক লিটার পানি পান করিয়ে সম্ভাব্য রোগীদের সত্যিকার অর্থে গ্লকোমা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাটির নাম ওয়াটার ড্রিংকিং টেস্ট (Water Drinking Test) একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যাদের বংশতগত কারণে গ্লকোমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তারা একসঙ্গে বেশিমাত্রায় পানি খেলে, যেমন- অনেকে হাইড্রেশন-থেরাপি হিসাবে সকালে ৩/৪ গ্লাস পানি একই সঙ্গে খেয়ে ফেলেন অথবা কিডনি রোগের জন্য অনেকে একসঙ্গে প্রচুর পানি খান তাদের চোখের চাপ বেড়ে গ্লকোমা রোগ হতে পারে। তাই এদের মাঝে মধ্যে গ্লকোমা রোগের জন্য চক্ষু পরীক্ষা করানো উচিত।

আমাদের দেশে শস্য ফলন মৌসুমে- জমি চাষে বা আবাদ করার সময় চোখের ইনফেকশন অনেক বেশি দেখা যায়। মাটিতে এবং শস্যাদির পাতায় বিশেষ করে ধান গাছের পাতায় ফাংগাস জীবাণু থাকে। কোন কারণে ঐ পাতার সাথে চোখের স্পর্শ হলে ফাংগাস জীবাণু দ্রুত চোখের কর্ণিয়াং সংক্রমণ হয় এবং কর্ণিয়ায় ক্ষত হয়, চোখের ভেতরে পূজ তৈরী হয়।
অ্যাসপারজিলাস, ক্যানডিডা, অ্যাকটিনোমাইকোসিস ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ফাংগাস দ্বারা চোখে সংক্রমণ হতে পারে। জীবাণুর প্রকারভেদে সংক্রমণ সামান্য থেকে মারাত্মক হতে পারে। অনেকের চোখের সংক্রমণ এতই প্রকট হয় যে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না এবং চোখ তুলে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।
ফাংগাস ছাড়াও কৃষি কাজ করার সময় চোখে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জীবাণু দিয়েও সংক্রমণ হতে পারে।

রক্তের উচ্চচাপের সঙ্গে চোখের উচ্চচাপ বা গ্লকোমার একটি সম্পর্ক আছে। দেখা যায় রক্তের চাপ প্রতি ১০ মিঃমিঃ মারকারি বাড়ার দরুন চোখের চাপ ১ মিঃমিঃ মারকারি বেড়ে যায়। যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় ২/১ দিনের মধ্যেই চোখের এই বাড়তি চাপ ঠিক হয়ে যায়। এই দিক দিয়ে রক্তের চাপ খুব বেশি না বাড়লে চোখে তেমন ক্ষতি হয় না। বরং ৬০/৭০ বছর বয়সে রক্তের ধমনি ও শিরা শক্ত হয়ে যাবার ফলে চোখে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ কম হয় এবং অপটিক নার্ভ ফাইবারের ক্ষতি হতে পারে। এই দিক দিয়ে বয়স্ক রোগীদের রক্তের চাপ কোন কারণে অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে অপটিক নাভের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং এর ফাইবারের ক্ষতিসাধন করে ও দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়।

জন্ম থেকে তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শিশুর চোখ উঠলে তা অনেক মারাত্মক হতে পারে। সাধারণ এই চোখ ওঠার নাম দেয়া হয়েছে “অফথ্যালমিয়া নিওনেটোরাম”।
গণকক্কাস, স্টাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, জীবাণুই নবজাতকের চোখ ওঠার কারণ। সাধারণ ডেলিভারিতে বাচ্চা ভূমিষ্ট হবার সময় চোখের এই সংক্রমণ ঘটে। নবজাতকের চোখের কর্ণিয়া ও কনজাংটিভা থাকে অত্যন্ত পাতলা। রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ‘অ্যাডেনয়েড লেয়ার’ থাকে অনুপস্থিত। সেজন্য- চোখ ওঠা রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। চোখের ভেতরে ও বাইরে পুজ জমে। কর্ণিযা ছিদ্র হয়ে জীবাণু চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
নবজাতকের চোখ ওঠা প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ বেশি জরুরী। মায়ের স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ ডেলিভারী খুবই জরুরী। নবজাতকের চোখ ওঠা রোগ নির্ণয়ের সংগে সংগে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া এবং ৫-১০ মিনিট পর পর চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ফোঁটা ওষুধ ব্যবহার করলে চোখ ভালো হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস যদি অনেকদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে তাহলে চোখে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। সঠিক চিকিৎসা ও লেজার না করা থাকলে চোখে রক্তক্ষরণ হয়, চোখের রক্তনালী বন্ধ হয়, রেটিনায় রক্তশূন্যতার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে রেটিনায় নতুন নতুন রক্তনালী তৈরী হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বা (চ.উ.জ.)। পি.ডি.আর অবস্থায় লেজার চিকিৎসা না করলে চোখের রেটিনার উপরে এবং ভিট্রিয়াসের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়, রেটিনার ট্রাকশনাল ডিটাচমেন্ট তৈরী হয় এবং চোখের কোণে নতুন রক্তনালী তৈরী হয়ে নিওভাসকুলার গ্লকোমা হয়- অর্থাৎ চোখের চাপ অনেক বেড়ে যায় ও অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে অপটিক নার্ভের ও রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং ইসকেমিক অপটিক নিউরোপ্যাথি হতে পারে। লেজার এর সাহায্যে এবং ভিট্রেকটমী অপারেশন সময়মত করতে পারলে এসকল জটিলতা তথা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডায়াবেটিসের সাথে চোখের পাওয়ারের একটা সরাসরি যোগ রয়েছে। রক্তে শর্করা বৃদ্ধি বা কমার ফলে চোখের পাওয়ার ও সাময়িকভাবে বাড়তে পারে বা কমতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে চোখের অ্যাকুয়াস হিউমারেও শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এর ফলে চোখের লেন্সে আস্রাবন বা অসমোটিক পরিবর্তন হয়। এতে লেন্সের মধ্যে পানি+চিনি বেশি করে প্রবেশ করে লেন্সটি পুরু হয়ে যায়, এর ফলে লেন্সের পাওয়ার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মায়োপিক শিফট। এই অবস্থায় অর্থাৎ বেশি মাত্রার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রোগী হঠাৎ করে দূরের বস্তু ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। উল্টো দিকে যারা আগে নিকটে পড়ালেখা করতে পারতেন না, তারা হঠাৎ করেই নিকটে দেখতে পারেন এবং কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলে থাকেন, তার চোখের পাওয়ারের উন্নতি হয়েছে। যে সকল ডায়াবেটিস রোগীর চশমা পরার প্রয়োজন হয় এবং প্রায়ই রক্তের শর্করা বেড়ে বা কমে যায় তারা প্রায়ই চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
অন্য দিকে যে সব রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাদের বেলায় মাঝে মাঝে উল্টো ঘটনা ঘটে । তারা যদি কোন কারণে বেশি ইনসুলিন নিয়ে ফেলেন বা প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম করে ফেলেন তখন হঠাৎ করে পূর্বের চশমা দিয়ে আর নিকটের কাজ, যেমন লেখাপড়া করতে অসুবিধা হয় । এখানে অতিরিক্ত ইনসুলিন ইনজেকশন নেবার ফলে রক্তের শর্করা পূর্বের তুলনায় অনেক কমে যায় এবং অ্যাকুয়াস হিউমারেও চিনির পরিমান কমে যায়। এ অবস্থায় অসমোটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে লেন্স থেকে পানি +চিনি বেরিয়ে আসে, ফলে লেন্সের পাওয়ার পূর্বের তুলনায় কমে যায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে চোখের পাওয়ার সাময়িকভাবে বাড়তে বা কমতে পারে বিধায় চক্ষু চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার পরই চোখের পাওয়ার পরীক্ষার উপদেশ দিয়ে থাকেন। একই কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে কোন প্রদাহ থাকলে বা মানসিক চাপ থাকলেও চশমার পাওয়ার দেয়া ঠিক নয়, তাতে প্রদত্ত পাওয়ার শীঘ্রই পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে।

লেজার রশ্মির চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে দৃষ্টিশক্তির বর্তমান মাত্রাকে ধরে রাখা। ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, সেটা প্রতিহত করার জন্য লেজার চিকিৎসা দেয়া হয়। কোন কোন রোগীর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়না তা নয় কিন্তু উন্নতির আশা না করাই ভাল।
যেমন :
১। রাতে অপেক্ষাকৃত কম দেখা। এর তীব্রতা নির্ভর করে চোখে রেটিনোপ্যাথি কি পর্যায়ে এবং কত সংখ্যা লেজার বার্ণ দেয়া হয়েছে তার উপর।
২। পুরো রেটিনাতে লেজার দেয়া হলে দৃষ্টির পরিসীমা কমে যায়। অবশ্য এতে রোগীর চলাফেরার তেমন কোন অসুবিধা হয় না।
৩। লেজার করার পর চোখের ম্যাকুলাতে পানি জমে ক্ষণস্থায়ীভাবে দৃষ্টির প্রখরতা সামান্য কমে যেতে পারে। তবে ১/২ সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় পূর্বের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যায়।
৪। পুরো রেটিনাতে লেজার দেবার ফলে চোখের সামঞ্জস্যকরণ বা একোমোডেশন কমে যায়, এর ফলে পূর্বের চশমা দিয়ে নিকটের বস্তু দেখতে ঝাপসা লাগতে পারে। চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিকটে দেখার পাওয়ার কিছুটা বাড়িয়ে নিলে আবার পরিস্কার দেখা সম্ভব।
৫। লেজার চিকিৎসার পর নতুন রক্তনালি প্রত্যাবৃত্তি করে। এই সময় চোখের রেটিনাতে সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। অত্যন্ত শেষ পর্যায়ের রেটিনোপ্যাথিতে ফাইব্রো-ভাসকুলার টিস্যু তৈরি হলে সাধারণত এমনটি ঘটে।
৬। অসাবধানতাবশত বা রোগী হঠাৎ  করে চোখ নাড়িয়ে ফেললে ম্যাকুলাতে বার্ণ হয়ে যেতে পারে, তাতে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
৭। বেশি বার এবং বেশি করে লেজার দেবার প্রয়োজন হলে চোখের লেন্সের মধ্যে লেজার রশ্মির শোষণ হতে পারে। এতে তুলনামূলকভাবে দ্রুত ছানি পড়তে পারে।

সঠিকভাবে চশমা ও এর কাচের যত্ন না করলে অল্পদিনে ফ্রেম নষ্ট হয়ে যায়, কাচ ভেঙ্গে যেতে পারে বা কাচে দাগ হয়ে তার ভেতর দিয়ে পরিস্কার না-ও দেখা যেতে পারে। চশমা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিচের নিয়মগুলি অনুসরণ করা উচিত।
(১) চশমার ফ্রেম পরিস্কার রাখতে হবে। অল্প গরম পানিতে মাঝে মধ্যে ধুয়ে এর ময়লা আঠা পরিস্কার করা যায়।
(২) চশমার কাচও একইভাবে পরিস্কার করা যায়। অনেক চশমার দোকানে পরিস্কার করার সল্যুশন পাওয়া যায়।
(৩) ব্যবহার না করার সময় চশমা এর বাক্সে বা খাপে ঢুকিয়ে রাখা উচিত। অবা ফ্রেমের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা যেতে পারে। কিন্তু কাচের দিক নিচে রাখা ঠিক নয়।
(৪) চশমা খোলবার সময়, সবসময়ই দুই হাত দিয়ে ফ্রেমের জয়েন্টের কাছে ধরে খুলতে হবে। এক হাতে খুলতে গেলে ফ্রেম বেঁকে যেতে পারে, এমনকি ভেঙ্গে যেতে পারে।
(৫) শীতকালে অনেকসময় কুয়াশাতে চশমার কাচ ঘোলা হয়ে যায়। বাজারে ডিফগিং (defogging) সল্যুশন পাওয়া যায় যা দিয়ে কাচ পরিস্কার করলে আর ঘোলা হয় না।

জীবনে কোনদিন রোদ-চশমা বা সানগ্লাস পরেন নি এমন লোক কম আছেন। রোদের মধ্যে চলাফেরার সময় সানগ্লাস খুবই আরামদায়ক। এছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন- চোখ ওঠা, প্রদাহ, ছানি অপারেশন-এর পরও চোখের আলোভীতি কমাবার জন্য সানগ্লাস ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। সানগ্লাসের সাহায্যে শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ দৃশ্যমান আলো (Visible light) কে ফিল্টার করা হয়। যার ফলে অতিরিক্ত রোদে চোখে আরাম অনুভূত হয়। সানগ্লাস বিভিন্ন রং-এর হতে পারে। যেমন বাদামি, ধুসর, গোলাপি, সবুজ, গাঢ়নীল ইত্যাদি। ব্যক্তিগত পছন্দের ওপরই সাধারণত: বিভিন্ন রং-এর সানগ্লাস নির্বাচন করা হয়। স্বচ্ছ কাচের ওপর এসব রং-এর ধোঁয়ার সাহায্যে কাচ রং করা হয় এবং সানগ্লাস তৈরি করা হয়। উন্নতমানের সানগ্লাস সব সময়ই গ্রাইন্ড ও পালিশ করা হয়। যার ফলে গ্লাসের ভেতর দিয়ে কোন বস্তুকে বা রাস্তাকে আকাবাঁকা মনে হয় না। আমাদের দেশে ফুটপাতে বা অনেক জায়গায় কমদামী সানগ্লাস পাওয়া যায়। নিম্নমানের রঙিন প্লাস্টিক সিট থেকে গোল করে কেটে এর গ্লাস তৈরি করা হয়। এসব গ্লাস প্রয়োজনীয় গ্রাইন্ডিং ও পালিশ করা হয় না বলে রাস্তাকে বা দৃশ্যমান বস্তুকে আঁকা-বাঁকা মনে হতে পারে (Object distortion)। এসব সানগ্নাস অনেকক্ষণ ব্যবহার করলে মাথাব্যথা হতে পারে।

তরুণ-তরুণীদের বেশি পছন্দ ফটোক্রমিক গ্লাস। কারণ, এই গ্লাসে প্রয়োজনীয় পাওয়ার ব্যবহার করে সব দেখা যায়। আবার রোদে এর রং পরিবর্তিত হয়ে গাঢ় হয়ে যায়- যা কিছুটা সানগ্লাসের কাজ করে। ফটোক্রমিক গ্লাসে সিলভার হ্যালাইড মাইক্রোক্রিস্টাল থাকে যা রোদে বিভাজিত হয়ে সিলভার ও হ্যালোজেন-এ রূপান্তরিত হলে কাচের রং-এর পরিবর্তন সাধিত হয়। গ্লাসটি রোদ থেকে ছায়ায় আনলে আবার সিলভার হ্যালাইড হয়ে যায় এবং কাচ সাদা হয়ে যায়। রোদে এই গ্লাস সানগ্লাসের মতো কাজ করলেও তা সানগ্লাসের মতো অত শক্তিশালী ফিল্টার নয়। সানগ্লাসে ৮৫% দৃশ্যমান আলো ফিল্টার হয় আর ফটোক্রমিক গ্লাসে মাত্র ১৫% আলো ফিল্টার হয়। তবুও রৌদ্রে ফটোক্রমিক গ্লাস বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সানগ্লাসের বিকল্প নয়। বাণিজ্যিকভাবে এসব গ্লাসকে ফটো-গ্রে, ফটো ব্রাউন, বা ভ্যারীগ্রে ইত্যাদি বলা হয়। আমেরিকার কর্নিং গ্লাস কোম্পানি এক ধরনের ফটোক্রমিক লেন্স তৈরি করেছে যা রোদে গেলে পূর্ণ সানগ্লাসের মতো হয়ে যায় কিন্তু ছায়াতে সামান্য রঙিন মনে হয়। বাণিজ্যিকভাবে এসব গ্লাসকে ফটোসান গ্রে, ফটোসান ব্রাউন ইত্যাদি নামকরণ করা হয়।

:)